হিল্লোল দত্ত,আলীকদম প্রতিনিধিঃ
বান্দরবানের আলীকদম উপজেলার আমতলীর আশ্রয়ণ প্রকল্পে বসবাসকারী প্রতিবন্ধী লাকাচিং তঞ্চঙ্গ্যা আত্মহত্যা করেননি, তাঁকে হত্যা করা হয়েছে। ঘটনার সাড়ে ৬ মাস পর পুলিশের তদন্তে এ তথ্য বেরিয়ে এসেছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হত্যাকান্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন আটককৃত ৩ জন এবং জড়িত ৩ জনকে আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে। আদালতে আসামীরা ধর্ষণের পর হত্যা করেছেন মর্মে স্বীকারোক্তি দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন আলীকদম থানার ওসি রফিক উল্লাহ্।
আজ ১৭মে শুক্রবার বিকাল ৩টার সময় আলীকদম থানার উক্ত মামলার বিষয়ে সংবাদ করেন। এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন আলীকদম থানার পরিদর্শক (তদন্ত) কানন চৌধুরী ও আলীকদম থানার উপ পরিদর্শক মো নুর ইসলাম এবং উক্ত মামলার বিষয়ে লিখিত প্রেসনোট পড়েন আলীকদম থানার অফিসার ইনচার্জ রফিক উল্লাহ্ ।
আলীকদম থানার অফিসার ইনচার্জ রফিক উল্লাহ্ সংবাদ সম্মেলনে বলেন, গত ২৫ নভেম্বর ২০১৮ তারিখে আলীকদম থানাধীন ০১ নং আলীকদম ইউনিয়নের ০৭নং ওয়ার্ড এর আমতলী অসতি ত্রিপুরা পাড়ার জঙ্গলে একটি গাছের সাথে লাকাচিং তঞ্চঙ্গ্যা নামের প্রতিবন্ধী মহিলার লাশ গামছা দিয়ে ঝুলানো আছে এমন সংবাদের ভিত্তিতে আলীকদম থানার পুলিশ ফোর্স ঘটনাস্থলে গিয়ে মহিলার লাশটি উদ্ধার করে। পরে ময়নাতদন্তের জন্য লাকাচিং তঞ্চঙ্গ্যার লাশ বান্দরবান সদর হাসপাতালে প্রেরণ করা হয় এবং এ বিষয়ে আলীকদম থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা রুজু করা হয়।
পরবর্তীতে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর জানা যায় লাকাচিং তঞ্চঙ্গ্যাকে যৌন নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে এবং লাকাচিং এর বোনের ছেলে ক্যানুমং তঞ্চঙ্গ্যা বাদী হয়ে আলীকদম থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। আলীকদম থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) কানন চৌধুরীর উপর উক্ত মামলার তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়।
তিনি আরও বলেন,মামলার তদন্তভার নেওয়ার পর থেকে বিভিন্ন স্থানে অভিযান পরিচালনা করেন এবং দীর্ঘ ছয় মাস পর বিভিন্ন তথ্যের মাধ্যমে ত্রিমথীয় ত্রিপুরা(২৪), জয় কুমার তঞ্চঙ্গ্যা (৩৮)ও জন ত্রিপুরা(৪২)কে আটক করেন। পরে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করলে তারা ধর্ষণের পর গলাটিপে হত্যার কথা স্বীকার করেন এবং আদালতেও তারা ১৬৪ ধারার জবানবন্দিতে একই কথা স্বীকার করেন বলে জানান।
আলীকদম থানার অফিসার ইনচার্জ রফিক উল্লাহ্ বলেন,আসামীরা লাকাচিং তঞ্চঙ্গ্যাকে পালাক্রমে করে। ধর্ষণের পর আসামীরা গলাটিপে লাকাচিংকে হত্যা করেন এবং হত্যার পর আসামীরা ঘটনাটিকে আত্মহত্যা বলে প্রচার করার জন্য পাশ্ববর্তী পাহাড়ের ঢালুতে জনমানবহীন স্থানে মৃতদেহটির গলায় গামছা দিয়ে বেঁধে একটি গাছের সাথে ঝুলিয়ে রাখে।পরে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায় এবং স্বাভাবিক চলাফেরা করেন বলে জানান।
ঘটনাটি লোমহর্ষক ও জঘন্য। মামলাটি বর্তমানে তদন্তাধীন। তদন্ত শেষে আসামীদের বিরুদ্ধে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করা হবে। গত ১১ই মে ত্রিমথীয় ত্রিপুরাকে গ্রেপ্তার করার হয় এবং তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ১২ই মে জয় কুমার তঞ্চঙ্গ্যা ও ১৪ই মে জন ত্রিপুরা প্রকাশ জহনকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে জানান আলীকদম থানার অফিসার ইনচার্জ রফিক উল্লাহ্।
লাকাচিং এর বোনের ছেলে ও মামলার বাদী ক্যানুমং তঞ্চঙ্গ্যা বলেন, আসল ঘটনা উদঘাটন ও আসামীদের গ্রেপ্তার করায় লাকাচিং এর আত্মা শান্তি পাবে এবং তাহার মাসির সাথে ঘটা জঘন্য ঘটনার জন্য আদালত আসামীদের শাস্তি দেবে সেদিনের অপেক্ষায় আমরা।
Leave a Reply