শনিবার, ২৮ জানুয়ারী ২০২৩, ০২:০৩ পূর্বাহ্ন
হিল্লোল দত্ত, আলীকদমঃ
ইটভাটা, কলকারখানা গরু-ছাগল কিংবা হাস-মুরগীর ফার্ম এ জাতীয় প্রতিষ্ঠান তৈরিতে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা আছে। যেখানে এ ধরনের ফার্ম লোকালয় থেকে দূরে গড়ে তোলার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু বর্তমানে নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে এসব প্রতিষ্ঠান এখন লোকালয়ে গড়ে উঠছে। ফলে ঐসব এলাকার পরিবেশ মারাতœক ভাবে দূষিত হচ্ছে। এতে বিপর্যস্থ হয়ে পড়ছে জনজীবন।
তেমনি বান্দরবানের আলীকদম উপজেলার সদর ইউনিয়নের কেন্দ্রবিন্দু চৌমুহনী আবাসিক এলাকার লোকালয়ে মোঃ জিয়াউর রহমান নামে বালিকা বিদ্যালয়ের একশিক্ষক ৩০-৪০টি গরু-ছাগল নিয়ে গড়ে তুলেছেন একটি খামার। খামারটিতে ২টি শেড রয়েছে একটিতে তিনি নিজে থাকছেন এবং অন্যটি তিন ভাগে বিভক্ত করে খোলামেলাভাবে গরু-ছাগলের খামার করেছেন। খামারটির আশে পাশে প্রায় স্থানীয় বসতবাড়ি ও ভাড়াঘর মিলে ৫০ থেকে ৬০ পরিবারের বসবাস। পাশাপাশি রয়েছে ২/৩টি বিদ্যালয়, মসজিদ ও হাসপাতাল। যথাযথ ভাবে খামার পরিচর্যা না করা ও গরু-ছাগলের মলমুত্র নির্দিষ্ট স্থানে না ফেলে যত্রতত্র ফেলার কারনে ঐ এলাকায় বসবাস করা দায় হয়ে পড়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, খামার থেকে ঐ এলাকার কাছাকাছি বসতবাড়ি গুলোর দূরত্ব ১০ থেকে ১৫ গজের মধ্যে। আর ১৫০ গজের মধ্যে প্রায় ৫০ থেকে ৬০টি পরিবারের বসবাস। নিয়ম অনুযায়ী জনবসতিপূর্ন এলাকা থেকে ২০০ মিটার দূরে খামার তৈরির নিয়ম থাকলেও তিনি এসব নিয়ম কানুনের তোয়াক্কা করছেন না। বানিজ্যিকভাবে চলা এ খামারের আশে পাশে স্যাঁতস্যাঁতে হয়ে আছে। খামারের আশে পাশে ড্রেনেজ ও সুয়্যারেজেরও কোনো ব্যবস্থা নেই। খামারের মলমুত্র যত্রতত্র ফেলার কারনে মশা-মাছির উপদ্রব বেড়ে রোগ জীবানুর সৃষ্টি হচ্ছে এবং দূর্গন্ধে টিকতে পারছে না ঐ এলাকার বাসিন্দারা।
খামারের আশেপাশের বাসিন্দা ও বসবাসরত ভাড়াটিয়াদের অভিযোগ, গরু-ছাগলের খামারের মলমুত্রের গন্ধে এখানে বসবাস করা অসাধ্য হয়ে পড়েছে। মলমুত্রের গন্ধের কারনে ঠিকমত নিঃশ্বাস নিতে পারছে না, খাওয়া-দাওয়াও করতে পারছে না। মশার উপদ্রব বেড়ে যাওয়ায় রাতে ঠিকমত বাসায়ও বসা যাচ্ছে না। পরিবেশ দূষিত হয়ে বয়োবৃদ্ধ ও বাচ্চারা অসুস্থ হয়ে পড়ছে। খামারের মালিককে দূর্গন্ধ না ছড়ায় মতো ব্যবস্থা নিতে বললেও তিনি কোন ধরনের কর্নপাত করছেন না। তাই এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে এলাকাবাসী স্থানীয় প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের আশু হস্থক্ষেপ কামনা করেছেন।
গরু-ছাগলের খামারের মালিক শিক্ষক মোঃ জিয়াউর রহমানের কাছে খামারের কারনে পরিবেশ দূষন হচ্ছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি এখানে খামার করি নাই। আমার ২০/২৫ টি ছাগল আছে আর ৩ টির মত গরু আছে। খামারের জন্য পরিবেশ ও প্রাণীসম্পদ অধিদপ্তরের কোনো ছাড়পত্র আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি আরো বলেন, পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নিয়ে বাংলাদেশের কোথাও কোনো খামার করেছে সেরকম আমার জানা নাই, আরেকটা কথা হচ্ছে আমি কোনো আবাসিক এলাকায়ও খামার করি নাই। আমার খামারের বয়স ৫ বৎসর, খামার আজকে একদিনে হয় নাই। কালকে এ ব্যাপারে আমাকে আর্মি থেকেও ফোন করেছে। আমি যেটা করি সেটা আমাদের দেশের গ্রাম অঞ্চলের প্রত্যেকেই করে। বাংলাদেশের কোন লোকালয়ে গরু-ছাগল নাই আপনি দেখেন। আমার দ্বারা যদি কারো ক্ষতি হয়ে থাকে তাহলে আমি সেটাকে মোডিফাই করার চেষ্টা করবো। এটার জন্য একবার সাংবাদিক থেকে ফোন করবে একবার আর্মি থেকে ফোন করবে এরকম তো না। আর যদি পরিবেশ অধিদপ্তরের কোনো ছাড়পত্র লাগে আপনারা ব্যবস্থা করে দেন আমি সেটাও নেবো, অসুবিধে কি।
সদর উপজেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা ডা.রুপম চন্দ্র মহন্ত বলেন, প্রাণীসম্পদ বিভাগ থেকে গবাদি পশু ও হাসমুরগীর খামারের জন্য রেজিস্ট্রেশন দেওয়া হয়। তবে আলীকদমে রেজিষ্ট্রার্ড কোনো খামার নেই। খামারের কারনে যদি জনসাধারনের ক্ষতি হয় তাহলে পরিবেশ অধিদপ্তর নতুবা নির্বাহী কর্মকর্তা মহোদয় কোর্টের মাধ্যমে ব্যবস্থা নিতে পারেন।
Leave a Reply