রবিবার, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৫:০০ অপরাহ্ন
আব্দুর রশিদ, নাইক্ষ্যংছড়ি প্রতিনিধিঃ
আসন্ন পার্বত্য জেলা বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামীলীগের সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকায় শীর্ষে রয়েছেন উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও নাইক্ষ্যংছড়ি এম.এ কালাম ডিগ্রি কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মোঃ শফিউল্লাহ।
দলের ভেতরে বাইরে তার প্রচুর সুনাম রয়েছে। শুধু একজন রাজনীতিবিদ হিসেবে নয়, শিক্ষাবিদ, সংবাদকর্মী, সমাজসেবক, দানবীর হিসেবেও অধ্যাপক শফিউল্লাহর পরিচিত। রাজনৈতিক জীবনে দক্ষ, মেধাবী ও চৌকষ হিসেবে সুবিদিত এই নেতার বিকল্প প্রার্থী আপাততঃ ভাবছেনা দলের তৃণমূল।
নাইক্ষ্যংছড়ি সদর ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি তসলিম ইকবাল চৌধুরী জানান, অধ্যাপক মোঃ শফিউল্লাহ দলের জন্য পরীক্ষিত নেতা। তিনি পাহাড়ীদের পরীক্ষিত বন্ধু পার্বত্য অঞ্চল বিষয়ক মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং এর ‘নিকটজন’ হিসেবে পরিচিতি। নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আপাততঃ তার বিকল্প প্রার্থী নেই।
নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা আওয়ামীলীগের ২০০১ সালের কমিটিতে শিক্ষা ও মানব সম্পদ বিষয়ক সম্পাদক নির্বাচিত হন মোঃ শফিউল্লাহ। তখন থেকে আজ অবধি দলের কর্মকান্ডে সার্বক্ষণিক সক্রিয় থেকেছেন। তিনি ২০০২ সালে নাইক্ষ্যংছড়ি সদর ইউ.পি নির্বাচনে চেয়ারম্যান এবং ২০১৪ সালের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী হিসেবে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্ধিতা করেন। দুই নির্বাচনে প্রচুর জনসমর্থন ও জনগণের ভালবাসা অর্জন করেন মোঃ শফিউল্লাহ।
২০০৮ সালের ৮ম জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং ২০০৯ সালের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দলের পক্ষ থেকে ‘প্রধান সমন্বয়ক’ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি।২০০৯-২০১১ সালের শেষ পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ৩ বছর উপজেলা আওয়ামীলীগের সদস্য সচিব, পরবর্তী উপজেলা কমিটির সহসভাপতি নির্বাচিত হন। আওয়ামী লীগ নেতা অধ্যাপক মোঃ শফিউল্লাহ ২০১৫ সাল থেকে উপজেলা সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি হিসেবে দায়িত্বরত আছেন। তিনি ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে উপজেলার ‘প্রধান সমন্বয়ক’ হিসেবে সঠিকভাবে দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে আরেক দফা নিজের যোগ্যতার প্রমাণ করেন। ২০১৮ সালের ২ মে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা আওয়ামীলীগের কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। ওই দিনের নির্বাচনে ১৭০ জন কাউন্সিলরের মধ্যে দেড় শতাধিক কাউন্সিলর অধ্যাপক মোঃ শফিউল্লাহকে ভোট দিয়ে সভাপতি নির্বাচিত করেন। অধ্যাপক মোঃ শফিউল্লাহ নাইক্ষ্যংছড়ি প্রেসক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা ও সদস্য। নাইক্ষ্যংছড়ি কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ কমপ্লেক্স, নাইক্ষ্যংছড়ি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, নাইক্ষ্যংছড়ি মদিনাতুল উলুম মডেল ইন্সটিটিউট আলিম মাদরাসা, আসারতলী তাফহীমুল কুরআন মাদরাসা, চকরিয়া উপজেলার খুটাখালী কিশলয় আবাসিক বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় এর সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন বর্তমানে তিনি।
এছাড়া নাইক্ষ্যংছড়ি বাজারের চৌধুরী, কিশলয় ট্রাস্টের সহ-সভাপতি, কক্সবাজার শহরের পূর্ব কলাতলী আদর্শ শিক্ষা নিকেতনের প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক হিসেবেও দায়িত্ব রয়েছেন। তার আর্থিক অনুদান ও একান্ত সহযোগিতায় সোনাইছড়ি উচ্চ বিদ্যালয়, লেমুছড়ি উচ্চ বিদ্যালয়সহ অনেক শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠিত হয়।
বিশেষ করে, পার্বত্য এলাকার মন্ত্রী বীর বাহাদুরের আন্তরিক সহযোগিতায় পৈত্রিক সম্পত্তিতে প্রায় ২০ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘সালেহ আহমদ টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজ’ প্রতিষ্ঠার কাজ চলমান রয়েছে। জননেতা মোঃ শফিউল্লাহ নাইক্ষ্যংছড়ি সদরে একটি মানসম্পন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও ঘুমঘুমে একটি কলেজ প্রতিষ্ঠা করার কাজ ইতো মধ্যে শুরু করেছেন বলে একান্ত স্বাক্ষাৎকালে এই প্রতিবেদকের নিকট জানন।
মোঃ শফিউল্লাহ জন্ম ও বংশ পরিচয়ঃ
১৯৭৬ সালের ১৯ এপ্রিল নাইক্ষ্যংছড়ি সদরের সমভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্ম নেন মোঃ শফিউল্লাহ । ৪ ভাই ৭ বোনের মধ্যে তিনি চতুর্থ, ভাইদের মধ্যে সবার বড়। বোনদের মধ্যে ১ জন সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা, ১ জন আইনজীবী ও ২ জন ব্যাংকার। বাকী ৩ বোন সমাজসেবক ও শিক্ষানুরাগী। মোঃ শফিউল্লাহ ছোট ১ ভাই মরিসাসের ‘প্রেসিডেন্ট এ্যাওয়ার্ড’ প্রাপ্ত সনামধন্য বিজ্ঞানী। মালয়েশিয়ার শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠান ‘ইউনিভার্সিটি মালয়া’-থেকে পি.এইচ.ডি ডিগ্রি অর্জন করে সেখানে ৫ বছর সহকারী অধ্যাপক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে ইউএস মেরিল্যান্ডে শিক্ষকতার পেশায় নিয়োজিত। স্বপরিবারে তারা সেখানে থাকেন।
মোঃ শফিউল্লাহ নিজের সংসারে ১ ছেলে ৩ মেয়ে রয়েছে। বড় মেয়ে এবার এস.এস.সি পরীক্ষার্থী। স্ত্রী শামসুদ্দোহা কুসুম জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতি বিষয়ে অনার্স-মাস্টার্স ডিগ্রি ধারী। তবে, তিনি পেশায় পুরোপুরি গৃহিনী। মোঃ শফিউল্লাহ ২০০০ সালে তিনি নাইক্ষ্যছড়ি এম.এ কালাম ডিগ্রি কলেজে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক পদে যোগদান করেন। পিতা মরহুম হাজি সালেহ আহমদ ১৯৬৭ থেকে ১৯৮৮ সাল পর্যন্ত নাইক্ষ্যংছড়ি সদর ইউনিয়নের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি আধুনিক নাইক্ষ্যংছড়ির রূপকার। রামু-নাইক্ষ্যংছড়িতে তার নামে করা হয় ‘সালেহ আহমদ সড়ক। নাইক্ষ্যংছড়ি বিজিবি ক্যাম্প, নাইক্ষ্যংছড়ি বাজার, নাইক্ষ্যংছড়ি মহিউসসুন্নাহ মাদরাসাসহ অনেক স্থাপনা হাজি সালেহ আহমদকে চিরস্মরণীয় করে রেখেছে।
মোঃ শফিউল্লাহর পিতা মরহুম হাজি সালেহ আহমদ, ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের সদস্য’ হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। তিনি আমৃত্যু মানবসেবক ছিলেন। জেঠা (পিতার বড় ভাই) মরহুম আলহাজ্ব মকবুল আহমদ ১৯৫৪ থেকে ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত বৃহত্তর নাইক্ষ্যংছড়ি, বাইশারী দোছড়ি, দোছড়ির চেয়ারম্যান ছিলেন। চাচা মরহুম হাফেজ আহমদ একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। উপজেলা আওয়ামীলীগের প্রতিষ্ঠাকালীন সভাপতি। তিনি দীর্ঘদিন এ দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ও বড় ভাই (শফিউল্লাহর পিতা) মুক্তিযোদ্ধে সহযোগিতার জন্য তৎকালীন ভারতীয় যুদ্ধ আঞ্চলের প্রধান, সেনাবাহিনীর চৌকষ কর্মকর্তা মেজর চরম সিংহ কর্তৃক সনদপ্রাপ্ত হন।
আরেক চাচা মরহুম মসিহ উদ দৌল্লাহ দোছড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এবং উইনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন। আরেক চাচা মরহুম আবদুর রহিম ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন।
ফুফাতো ভাই আবুল হোসেন প্রায় ২৫ বছর ধরে দোছড়ি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন। ২০১৮ সালে তিনি মারা যান। ভগ্নিপতি মোঃ ইকবাল নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার দুইবারের নির্বাচিত চেয়ারম্যান। ২০০৯ সালেও তিনি আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। দলীয় কোন পদপদবীতে না থাকলেও তিনি এখনো প্রচুর জনপ্রিয় নেতা হিসেবে পরিচিত।
মোঃ শফিউল্লাহ শিক্ষা জীবনঃ
মোঃ শফিউল্লাহর শিক্ষাজীবনের হাতেখড়ি নাইক্ষ্যংছড়ি মডেল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়। ওই স্কুল থেকে ১৯৮৬ সালে ৫ম শ্রেণীতে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পেয়ে উপজেলা পর্যায়ে প্রথমস্থান করেন। তিনি ছোটকাল থেকেই বুদ্ধিমান ও প্রখর মেধাবী ছাত্র হিসেবে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের কাছে পরিচিত ছিলেন।১৯৮৯ সালে নিম্নমাধ্যমিকে জুনিয়ার বৃত্তি পরীক্ষায় ট্যালেন্টপুলে বৃত্তিসহ কেন্দ্র পর্যায়ে প্রথম হন। সালেহ আহমদ উচ্চবিদ্যালয়ে থেকে ১৯৯২ সালে এসএসসি পরীক্ষায় (বিজ্ঞান বিভাগ) সর্বোচ্চ নাম্বার নিয়ে প্রথম স্থানে উত্তীর্ণ হন। ভাল মানের একজন ‘স্কাউট সংগঠক ও জাম্বুরি-ক্যাম্পুরি প্রশিক্ষক’ হিসেবে মোঃ শফিউল্লাহ পরিচিত ছিলেন। ১৯৯৪ সালে চট্টগ্রাম কলেজ থেকে প্রথম বিভাগসহ এইচএসসি পাশ করে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্স (বাংলা)-এ ভর্তি হন। পিতার মৃত্যুজনিত কারণে সঠিক সময়ে অনার্স সম্পন্ন করতে পারেননি। তবু শিক্ষাজীবন থেকে সরে আসেননি। ১৯৯৬ সালে স্নাতক, ১৯৯৭-৯৮ সালে এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ থেকে ‘সরকার ও রাজনীতি’ বিষয়ে কৃতিত্বের সাথে এমএসএস (মস্টার্স) পাশ করেন। এরপর আরো উচ্চতর ডিগ্রির মানসে ‘এমফিল’ গবেষণার জন্য ২০০৩-২০০৪ সেশনে প্রাচ্যের অক্সফোর্ড ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধীনে ভর্তি হন। তার গবেষণার শিরোনাম ছিল-‘বাংলাদেশ মায়নমার সম্পর্ক ও রোহিঙ্গা সমস্যা।’
Leave a Reply