বুধবার, ২৯ নভেম্বর ২০২৩, ০৮:২৬ পূর্বাহ্ন
অংগ্য মারমা, খাগড়াছড়ি প্রতিনিধিঃ
খাগড়াছড়ি জেলায় টানা বৃষ্টি বর্ষণে জনজীবনে দূর্ভোগ তৈরী হয়েছে। জেলার দীঘিনালা উপজেলা পাহাড় ধসে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। তার নাম যুগেন্দ্র চাকমা(৪০)। তিনি দীঘিনালা বাবুছড়া ইউনিয়নের দুর্গম উল্টাছড়ি এলাকার সুবধন চাকমার ছেলে। পাহাড় ধসের ঘটনায় চার পরিবারে ৭জন সদস্য আহত হয়েছে জানা গেছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সন্ধ্যায় ভারী বর্ষণে দীঘিনালার বাবুছড়া ইউনিয়নের দুর্গম উল্টাছড়ি গ্রামের একটি পাহাড় চূড়ায় থাকা চারটি বাড়ি ধসে পড়ে। এসময় যুগেন্দ্র বাসায় ছিলেন। বাড়িসহ ধসে পড়লে ঘটনাস্থলে মাটি চাপা তার মৃত্যু হয়।
বাবুছড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সন্তোষ জীবন চাকমা ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ঘটনাস্থল অনেক দুর্গম এলাকায় তাই তাৎক্ষণিক যাওয়া সম্ভব নয়। তবে পরিবারে ৭জন সদস্য আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেলেও তাদের পরিচয় জানা যায়নি।
এদিকে খাগড়াছড়ি জেলা শহর পাহাড়ের ঝুঁকিতে থাকা ৩০ পরিবারকে উদ্ধার করে নিরাপদ আশ্রয়ে পাঠিয়েছে জেলা প্রশাসন। খাগড়াছড়ি সদরের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, পৌরসভা ও পুলিশের পক্ষ থেকে শালবন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের উদ্ধার করা হয়।
খাগড়াছড়ি সদরে পানিবন্দী ও পাহাড় ধসের ঝুঁকিতে থাকা পরিবারদের জন্য ১২টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। তাছাড়া জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দূর্যোগ মোকাবেলায় নয় উপজেলায় ৪৫টি আশ্রয় কেন্দ্র ও মনিটরিং সেল খোলা হয়েছে।
খাগড়াছড়ির জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, খাগড়াছড়ির ৯টি উপজেলায় পাহাড় ধসের ঝুঁকিতে বসবাস করছে প্রায় ৮ শতাধিক পরিবার। প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদের তালিকা করে পুনর্বাসনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। অতি বৃষ্টিতে সম্ভাব্য দুর্যোগ মোকাবিলায় জরুরি সভা করেছে খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসন। এছাড়া পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে বসবাসকারীদের নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে মাইকিং অব্যাহত রেখেছে প্রশাসন। জেলা শহরের বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা পরিদর্শন করেছেন জেলা প্রশাসক মো: শহিদুল ইসলামসহ সামরিক-বেসামরিক সরকারি কর্মকর্তারা।
প্রবল টানা বর্ষণে অব্যাহত থাকায় খাগড়াছড়ির চেঙ্গী ও মাইনী নদীর উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলে জেলা সদরের মুসলিম পাড়া, পেরাছড়া, গোলাবাড়ি, শান্তিনগর, অপর্না চৌধুরী পাড়া, রাজ্যমনি পাড়া, কালাডেবা, বটতলী, গুগড়াছড়ি, বাসটার্মিনাল, কলেজ পাড়া, খবংপুড়িয়া, শব্দমিয়া পাড়া বন্যা কবলিতসহ বেশ কিছু গ্রাম প্লাবিত হয়ে পাঁচ শতাধিক পরিবার পানি বন্দী হয়ে পড়েছে। এরই মধ্যে নিচু ও কিছু উচু এলাকায় প্লাবিত হওয়ায় খাগড়াছড়ি সদরের ২শত পরিবার আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান করছে।
খাগড়াছড়ির জেলা প্রশাসক মো: শহিদুল ইসলাম জানান, খাগড়াছড়ি সদরের পাহাড় ধসের ঝুঁকিতে থাকা ৩০ পরিবারকে বসতবাড়ি থেকে বের করে আনা হয়েছে। তাদের মধ্যে ১৫ পরিবার শালবন এলাকায় খোলা হয়েছে জেলা প্রশাসনের আশ্রয় কেন্দ্রস্থল। এছাড়া পানিবন্দী পাঁচ শতাধিক পরিবার জেলা সদরের বিভিন্ন আশ্রয় কেন্দ্রে রাখা হয়েছে।
পৌরসভা ও জেলা প্রশাসনের খাগড়াছড়ি সদর জোন কমান্ডার, পার্বত্য জেলা পরিষদ পক্ষ থেকে তাদের মাঝে ত্রাণ ও বিশুদ্ধ পানীয় বিতরণ করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত কোনো হতাহতের ঘটনা ছাড়া জেলা সদরের শালবন এলাকায় পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণ ভাবে বসবাসকারীদের নিরাপদে সরিয়ে নিতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
উল্লেখ্য, গত বুহস্পতিবার আংশিক বৃষ্টি শুরু হলেও পুরোদমে থেমে থেমে বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকায় খাগড়াছড়ির শহরতলী ও ৯াট উপজেলায় পাহাড় ধসের ঝুঁকি দেখা দিয়েছে। খাগড়াছড়িতে প্রায় ১৭২ দশমিক ৬ মিলি মিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
Leave a Reply