রবিবার, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৫:৪২ অপরাহ্ন
মংছিংপ্রু মার্মা; লামা (বান্দরবান) প্রতিনিধিঃ
বান্দরবান জেলার লামা ও আলীকদম উপজেলায় তিনদিন টানা ভারী বর্ষণে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। পাহাড়ী ঢলে গত (১১-১২ জুন) দুইদিন যাবত লামা উপজেলা নির্বাহী অফিসার বাসভবনসহ উপজেলাতে প্রায় ১০ হাজার পরিবার পানি বন্দী। নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে পড়েছে। জেলা প্রশাসক থেকে ভারী বর্ষণের সতর্কবাণী বিজ্ঞপ্তি জারি করে, উপজেলা প্রশাসন পক্ষ থেকে পাহাড়ে পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকারীদেরকে নিরাপদে আশ্রয় গ্রহনের জন্য বলা হয়েছে। লামা পৌর এলাকায় পানিবন্দী জনসাধারণের জন্য ৩টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। ফাসিঁয়াখালী সড়কের সাথে লামা-আলীকদম সড়কের বিভিন্ন পয়েন্ট যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত শনিবার থেকে তিন দিনের টানা প্রবল বর্ষণের ফলে সৃষ্ট পাহাড়ি ঢলে লামা পৌর এলাকাসহ উপজেলার ৭টি ইউনিয়ন ও আলীকদম উপজেলার বিভিন্ন নিচু এলাকা বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। গত সোমবার সকালে বৃষ্টি হালকা হওয়ায় বিকালের দিকে পানি নেমে গেলেও রাতে পুনরায় ভারী বর্ষণে মঙ্গলবার (১২জুন) ভোররাত থেকে আবার পানি বাড়তে থাকে। এতে লামার মাতামুহুরী নদী, লামাখাল, ইয়াংছা খাল, মিনঝিরি খাল, বগাইছড়িখাল ও পোপা খালসহ পাহাড়ি বিভিন্ন ঝিরিগুলোতে পানি বৃদ্ধি পেয়ে গৃহবন্দি হয়ে পড়েছে প্রায় ১০ হাজার পরিবার।
মাতামুহুরী নদী বিপদসীমা অতিক্রম করায় নদীর দু’পাড়ে বসবাসরত পৌরসভা এলাকার শীলেরতুয়া মার্মা পাড়া, পশ্চিমপাড়া, লামা বাজারপাড়া, লাইনঝিরি ফকিরপাড়া, ছোট নুনারবিল পাড়া, অংহ্লাপাড়া, বৈল্লারচর, মেরাখোলা, মিশনপাড়ার হাজার হাজার মানুষ নদী ভাঙ্গন আতংকে রয়েছে। লামা পৌর সভা শিলের তুয়া মার্মা পাড়ায় গত তিন’বর্ষায় এ নদী ভাঙ্গনে গৃহহারা হয়েছে অর্ধ শতাধিক পরিবার। ইতিমধ্যে ভারী বর্ষণে উপজেলার বিভিন্ন স্থানের পাহাড় ধসে প্রানহানির আশঙ্কায় উপজেলা প্রাশাসন, লামা পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদগুলোর পক্ষ থেকে মাইকিং করে পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকারীদের নিরাপদে আশ্রয় নেয়ার জন্য দফায় দফায় বলা হয়েছে।
আইএইচপিডি লামা বেসরকারী সংস্থার চেয়ারম্যান মংক্যচিং হেডম্যান জানান, লামা পৌর এলাকায় শিলের তুয়ার মার্মা, বড় ও ছোট নুনারবিল পাড়া, কেয়াং পাড়া, লামা বাস ষ্টেশন, উপজেলা নির্বাহী অফিসার বাস ভবন, উপজেলা ডরমেটোরি, নুনারবিল সরকারি মডেল প্রা. বি. রাস্তা, হলিচাইন্ড পাবলিক স্কুল সড়ক, লামা সরকারি উচ্চ বি. সড়ক পাহাড়ি ঢলে প্লাবিত হয়ে পড়েছে।
ড্রাইভার মো. বেলাল ও আলীকদম কুরুকপাতা ইউনিয়ন সচিব জানিয়েছেন, লামা-আলীকদম সড়কের শিলের তুয়া ও তাল গাছ তলাসহ বিভিন্ন পয়েন্ট পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় আলীকদমের সাথে সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। বাজারের ব্যবসায়ীরা তাদের মালামাল এবং উপজেলা প্রশাসনসহ বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি দপ্তরসমুহ মালামাল ও নথিপত্র নিরাপদে সরাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন।
লামা বাজার পাড়ার বাসিন্দা ও ব্যবসায়ী বিধান দাশ ও আনোয়ার হোসেন বলেন, প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে ৪-৫ বার পাহাড়ি ঢলের পানিতে ঘরবাড়ী ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান প্লাবিত হয়। ফলে বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হচ্ছে তাই লামাকে বন্যা মুক্ত করতে নদী গতি পরিবর্তন করা অতিব জরুরী।
লামা পৌরসভার মেয়র মো. জহিরুল ইসলাম বলেন, পৌরসভার কাউন্সিলরদের সমন্বয়ে বন্যার পরিস্থিতি সার্বক্ষনিক তদারকি করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য কমিটি গঠন করা হয়েছে। বন্যা কবলিত জনসাধরনকে নিরাপদে সরিয়ে আনার জন্য নৌকার ব্যবস্থা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আশ্রিত ও পাহাড়ী ঢলে প্লাবিতদের মধ্যে শুকনো খাবার বিতরন করা হয়েছে।
লামা উপজেলা নির্বাহী অফিসার নূর-এ-জান্নাত রুমি বলেন, বন্যা কবলিত এলাকাগুলো পরিদর্শন করা হয়েছে। পৌর এলাকার তিনটি আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থানকারীদের জন্য খিচুরী ও শুকনো খাবার ব্যবস্থা করা হয়েছে। সন্ধ্যা নাগাদ প্লাবিত জনসাধরনকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন।
Leave a Reply