রবিবার, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০১:০০ অপরাহ্ন
শেখ ইমতিয়াজ কামাল ইমন;রাঙ্গামাটি প্রতিনিধিঃ
গত কয়েক দিনের অব্যাহত ভারী বর্ষণের ফলে রাঙ্গামাটির নানিয়ারচর উপজেলায় ১১ জন নিহত হয়েছে। গতকাল ভোর রাতে নানিয়ারচর উপজেলায় বড়পুল পাড়া ও ধর্মচান পাড়া ও হাতি মারায় এই হতাহতের ঘটনা ঘটে। নানিয়ারচর উপজেলা ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান কোয়ালিটি জানান, উপজেলার সাবেক্ষং ইউনিয়নের বড়পুল পাড়া ৪ জন, ধর্মচানপাড়া ৪ জন এবং হাতিমারায় ২ জন, ঘিলাছড়িতে ১ জন পাহাড়ের মাটি চাপা পড়ে নিহত হয়েছে। এদিকে রাঙ্গামাটি পৌর শহরের ২০ থেকে ২৫ টি স্থানে মাটি ধ্বসের ঘটনা ঘটলেও কোন হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। এছাড়া রাঙ্গামাটি-চট্টগ্রাম সড়কের বিভিন্ন স্থানে পাহাড় ধ্বসের মুল সড়ক ভেঙ্গে যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গত ৩ দিনের প্রবল বর্ষণের ফলে নাণিয়ারচর উপজেলার বড়পুল পাড়ায় পাহাড় ভেঙ্গে একটি বাড়ীর উপর পড়লে একই পরিবারের ৪ জন নিহত হয় এবং ধর্মচান পাড়ায় পাহাড়ের পাদদেশে থাকা ঘর ভেঙ্গে একই পরিবারের ৪জন এবং হাতি মারায় ২ ভাই বোন ও ঘিলাছড়িতে ১ জন নিহত হয়েছে। এছাড়া এই স্থানে ৩ জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
নিহতরা হলেন, বুড়িঘাট ইউনিয়নের ধরমপাশা কার্বারী পাড়ায় ফুলদেবী চাকমা (৫৫) তার মেয়ে ইতি দেওয়ান (১৯) পুত্রপধু স্মৃতি চাকমা (২৩), নাতি আয়ুব দেওয়ান (দেড় বছর), নানিয়ারচর বড়পুল পাড়ায় সুরেন্দ্র লাল চাকমা (৫৫), তার স্ত্রী রাজ্য দেবী চাকমা (৫০) মেয়ে সেনালী চাকমা (১৩), নানিয়ারচর ইউনয়নের বড়পুলপাড়ার মহিলা মেম্বারের ছেলে রোমেন চাকমা (১৪), ঘিলাছড়ি ইউনিয়নের বৃষ কেতু চাকমা, (৬০), হাতিমারা এলাকার রিপোল চাকমা (১৪), ও রীতা চাকমা (৮)।
রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসক এ,কে,এম মামুনুর রশিদ জানান, নানিয়ারচর উপজেলা হতাহতের খবর পেয়েছে। কতজন নিহত হয়েছে তা এখনো সঠিক বলতে পারবো না। এখনো পর্যন্ত আমার কাছে জন ৮ হওয়ার খবর এসেছে। আমাদের তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে।
এদিকে রাঙ্গামাটিতে এক টানা ভারী বৃষ্টিপাতে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। রবিবার সকাল থেকে বৃষ্টি শুরু হলেও রাত থেকে একটানা ভারী বর্ষণে রাঙ্গমাটি জনজীবন থমকে যায়। গত রাত ২ টার দিকে রাঙ্গামাটি শহরের কল্যাণপুর এলাকায় একটি বিশাল ওয়াল ধ্বসে পড়ে একটি বাড়ীর লোকজন আটকা পড়ে। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থলে গিয়ে দেয়াল ভেঙ্গে তাদের উদ্ধার করে।
এছাড়া চম্পক নগর, লোকনাথ আশ্রম ও ভেদভেদী, রাঙ্গাপানিসহ আশেপাশে কিছু এলাকায় ছোটখাটো দেয়াল ও পাহাড় ধ্বসের ঘটনা ঘটে। ফলে ঘরবাড়ির উপর দেয়াল চাপা পড়লেও হতাহতের কোন ঘটনা ঘটেনি।
রাঙ্গামাটি চট্টগ্রাম সড়কের বিভিন্ন স্থানে কিছু কিছু পাহাড় ধ্বসের ঘটনা ঘটে। তবে যান বাহন চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। অন্যদিকে রাঙ্গামাটি চট্টগ্রাম সড়কের রানীরহাট সড়কের উপর পানি উঠে গেলে রাঙ্গামাটি-চট্টগ্রামের সাথে সরাসরি সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে।
রাঙ্গামাটি জেলা পরিষদ সদস্য ত্রিদীব কান্তি দাশ জানান, পাহাড় ধ্বসের ঘটনার খবর পেয়ে রাঙ্গামাটি জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বৃষ কেতু চাকমা ও আমি ঘটনাস্থলের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছি। কিন্তু রাঙ্গামাটি-মহালছড়ি সড়কের বেশ কিছু স্থানে পাহাড় ধ্বস হওয়ায় বড় যানবাহনগুলো আটকা পড়ে। পরে আমি নিজেই পায়ে হেঁটে হাতিমারা এলাকায় গিয়ে উপস্থিত হয়ে নিহতদের সৎকার করার জন্য দুইজনকে ১০ হাজার টাকা করে ২০ হাজার টাকা প্রদান করেছি। এছাড়া নিহত অপর ৯ জনের জন্য ১০ হাজার টাকা করে প্রদান করা হবে।
এদিকে রাঙ্গামাটি সড়ক বিভাগের এসও মোঃ আবু মুছা জানান, রাঙ্গামাটি চট্টগ্রাম সড়কের বেশ কয়েকটি জায়গায় ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। সকাল থেকে রাঙ্গামাটি সড়কের পাহাড় ধ্বসে পড়া মাটি পরিস্কার করে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক করেছি। তিনি বলেন, ধেপ্পোছড়ি এলাকায় পাহাড় ধ্বসে মূল সড়কও ভেঙ্গে গেছে।
Leave a Reply