শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ০৬:১৯ অপরাহ্ন
মংহাইথুই মারমা,রুমা প্রতিনিধিঃ
কাজু বাদাম জুমভিত্তিক চাষাবাদ বাড়ছে রুমায়। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি, উৎপাদিত পণ্য বিক্রির বাজার তৈরি, লাভজনক ফল-ফসলের ব্যাপক ফলন, প্রাচীন বদ্ধমূল ধারণা থেকে বেরিয়ে এসে আধুনিক চেতনায় উদ্বুদ্ধ হওয়ায় ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে বান্দরবানে রুমায় পাহাড়ি এলাকায়। প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলো কিছুটা পিছিয়ে থাকলেও যেখানে পরিবহন ব্যবস্থা তুলনামূলক সহজ হয়েছে, সেখানে বাড়ছে আম, কফি, কাজু বাদামসহ বিভিন্ন অর্থকরী ফসলের আবাদ।
স্থানীয় ভাষায় ‘তাম’ বা কাজু বাদাম এমন একটি ফসল। ইদানিং দামি ফল হিসেবে কাজুর পরিচিতি সবার কাছে। আমদানি নির্ভর এ ফলটি নতুন স্বপ্ন দেখাচ্ছে পাহাড়ে। বাধা শুধু সংরক্ষণে সমস্যা আর পোস্ট প্রসেসিং বা উৎপাদনের পর খাওয়ার উপযোগী করে প্রস্তুতকরণে। উৎপাদন ও চাষাবাদ যে হারে বাড়ছে তাতে খুব শিগগিরই পাহাড়ে কাজু ইন্ডাস্ট্রি গড়ে তোলা সম্ভব বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
রুমা উপজেলায় বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, অন্য ফসলের পাশাপাশি ব্যাপকহারে বেড়েছে কাজু বাদামের চাষ। পাহাড়িরা যে চাষাবাদে লাভ বেশি সেটা ঝুঁকিও বেশি। এমনকি জমিতে অন্য ফসল থাকলেও তা কেটে নতুন অর্থকরী ফসলে মনোযোগ দেন। ৪৫-৬০ বছর ধরেই রুমায় পাহাড়ে কাজু চাষ হচ্ছে। তবে বাণিজ্যিক চাষাবাদ বেড়েছে সম্প্রতি।
পাহাড়ে কাজু বাদাম চাষ বাড়তে দীর্ঘদিন কাজ করছেন রুমা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ ইউসুফ। কথা হলে তিনি বলেন, পাহাড়ি মাটি, আবহাওয়া সবই কাজু বাদাম চাষের বিশেষ উপযোগী। তাছাড়া পরিচর্যা ও উৎপাদন খরচ কম হওয়ায় অতিরিক্ত কোনো খরচ নেই। আর আগে দাম না পাওয়ার যে বিষয়টি ছিল সেটি এখন আর নেই। বর্তমানে রুমা উপজেলায় বেশি পরিমাণ কাজুর চাষ হচ্ছে। জুম চাষিরা আগে একটি পাহাড় পরিষ্কার করলে পরে কয়েকবছর আর সে জমিতে চাষ করতে পারতো না। তাই ওইসব জমিতে কাজু বাদাম লাগানো হচ্ছে বলে জানিয়েছেন কৃষকেরা। এতে চাষীরা লাভবান হচ্ছে। এখন প্রায় ৩শ হেক্টর জমিতে চাষ হচ্ছে। আর পুরো পাহাড় ধরলে হয়তো ৫শ হবে। বীজ থেকে চারা হয়। চারা লাগানোর তিন থেকে চার বছরের মধ্যে ফল ধরে। ফেব্রুয়ারি-মার্চে ফুল ধরে। ফল সংগ্রহ করা হয় মে মাসে।
চাষীরা জানান, পাহাড়ে কাজু বাদাম গাছে ফুল ও ফলে রোগ-বালাইও কম। আর একটি গাছে জাতভেদে ৪ থেকে ৪০ কেজি পর্যন্ত বাদাম হয়। সাধারণত পেকে নিচে পড়ে গেলে সংগ্রহ করে শুকানো হয়। আর শুকালে ১ বছর রাখা সম্ভব।
সংশ্লিষ্ট কৃষি কর্মকর্তা বলছেন, পার্বত্য মন্ত্রণালয় কাজু বাদাম প্রসেসিং মেশিনের ও ইন্ড্রাস্ট্রি তৈরির কাজে আগ্রহী। এর জন্য দরকার ৪-৫ কোটি টাকা। আর যদি আরও এক হাজার কৃষকের মাধ্যমে দুই হাজার হেক্টর জমিতে কাজু বাদামের চাষ করা যায় তাহলে দেশের চাহিদা মেটানো সম্ভব। দেশের বাইরে রপ্তানি করা যেতে পারে। এখন অপেক্ষা শুধু সরকারি যথাযথ পৃষ্ঠপোষকতার।
Leave a Reply