মঙ্গলবার, ০৯ অগাস্ট ২০২২, ০৮:১৫ পূর্বাহ্ন
মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম, বিশেষ প্রতিনিধি লামাঃ
বান্দরবানের লামা উপজেলার ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের বনপুর এলাকায় বিভিন্ন স্থানে রাতের আধাঁরে পাচারের জন্য মজুদ করা হয়েছে ২ লক্ষাধিক ঘনফুট অবৈধ পাথর। কোন প্রকার সরকারি অনুমোদন ও পারমিট ছাড়া পাহাড়-খাল-নদী-ছড়া খুঁড়ে উত্তোলনকৃত এই অবৈধ পাথর থেকে কোন রাজস্ব পায়নি সরকার। ইতিমধ্যে পাথর কোয়ারী ও দুর্গম জায়গা থেকে পাথর সমুহ আহরণ করে বনপুর-ইয়াংছা ও বনপুর-হারগাজা সড়কের পাশে এনে পাথর গুলো রাখা হয়েছে। বিপুল পরিমাণের মজুদকৃত এইসব পাথর প্রশাসনের চোখকে ফাঁকি দিয়ে নিয়ে যাওয়ার পায়তারা চলছে।
লামা উপজেলা নির্বাহী অফিসার নূর-এ জান্নাত রুমি বলেন, গতবছর ও চলতি বছরের এখনো পর্যন্ত লামা উপজেলায় কোন পাথরের পারমিট দেয়া হয়নি। তবে পাথর ব্যবসায়ীরা জেলা প্রশাসনের কাছে বেশকিছু আবেদন করেছে।
সরজমিনে ঘুরে ও স্থানীয় পাহাড়ি-বাঙ্গালীদের কাছ থেকে জানা যায়, উপজেলার ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের বনপুর, ছমুখাল, পাইকঝিরি, ওয়াক্রা পাড়া, খ্রিস্টান পাড়া, মরা ঝিরি, চচাই পাড়া, কেরানী ঝিরি, কইতরের ঝিরি, বুদুম ঝিরি, চিনির ঝিরি, গয়ালমারা, বালস্ট কারবারী পাড়া ঝিরি, জোয়াকি পাড়া, বাকঁখালী ঝিরি, হরিণ ঝিরি, রবাট কারবারী পাড়া ঝিরি, বালুর ঝিরি, আলিক্ষ্যং ঝিরিতে কয়েক হাজার স্তুপে ২ লক্ষাধিক অবৈধ পাথর জমা করেছে পার্শ্ববর্তী চকরিয়া উপজেলার বেশ কিছু পাথর ব্যবসায়ীরা। যা হতে প্রতিরাতে চুরি করে পাচার হচ্ছে বলেও জানায় স্থানীয়রা।
এইসব নদী, খাল, ছড়া ও ঝিরি হতে চকরিয়া ও লামা উপজেলার প্রায় ৬০ জনের অধিক ব্যবসায়ী ২ সহ¯্রাধিক শ্রমিক দিয়ে পাথর উত্তোলন করছে বলে জানা যায়। উক্ত ব্যবসায়ীরা হল, চকরিয়ার মনু মেম্বার, মহিউদ্দিন চৌধুরী, নাছির উদ্দিন, জামাল উদ্দিন ফকির, জমির উদ্দিন (ভেন্ডি বাজার), মো. দলিল (পালাকাটা), আবচার উদ্দিন, জকির উল্লাহ, জয়নাল আবেদীন ড্রাইভার, ছৈয়দ আলম, বেলাল উদ্দিন কোং, শুক্কুর মিস্ত্রি, মো. সোহেল ভুট্টু, আমির হামজা (হাঁসের দিঘি), এখলাস (হাঁসের দিঘি), মুজিব, এনাম, ফাঁসিয়াখালীর হুমায়ন কবির চৌধুরী, মো. আক্তার হোসেন (নতুন পাড়া), ওসালা মার্মা, ফেরদৌস (ইয়াংছা) সহ প্রমূখ। কয়েকজন পাথর ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বললে তারা জানায় তারা পাথরের পারমিটের জন্য আবেদন করেছে। পারমিট পাওয়ার আগেই পাথর তুলা হল কেন ? এমন প্রশ্নের কোন উত্তর না দিয়ে এড়িয়ে যায় ব্যবসায়ীরা।
এলাকার লোকজন উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, পাথর উত্তোলন, পাচার করতে গিয়ে ব্যবসায়ীরা পানির উৎস নদী, খাল, ছড়া গুলো ধ্বংস করছে। অপরদিকে ভারি ট্রাকে করে পরিবরণ করতে গিয়ে গ্রামীণ রাস্তাঘাট সমুহ ভেঙ্গে নষ্ট করছে। এতে করে অত্র অঞ্চলের সাধারণ মানুষের জীবন যাত্রা দুর্বিসহ হয়ে উঠেছে।
ফাঁসিয়াখালী ইউপি চেয়ারম্যান জাকের হোসেন মজুমদার জানান, আমার ইউনিয়নের কোন ঝিরি ছড়াতে ভাসমান পাথর নেই। প্রভাবশালী সিন্ডিকেট গত ৭/৮ বছর ধরে পাহাড় খুঁড়ে ও মাটি কেটে পাথর উত্তোলন করছে। আমাদের বাধা কেউ পাত্তা দিচ্ছেনা।
এই বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজার অঞ্চলের সহকারি পরিচালক (লামা উপজেলার দায়িত্বরত) সাইফুল আশ্রাব বলেন, পারমিট ছাড়া ও অনুমতি বিহীন লামা উপজেলায় পাথর তুলা হচ্ছে এমন তথ্য পেয়েছি। দ্রুত অবৈধ পাথর ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে উপজেলা প্রশাসনকে সাথে নিয়ে মাঠে নামা হবে।
Leave a Reply