শুক্রবার, ০১ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৩:৫২ পূর্বাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
বান্দরবানে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ৬শ পরিবারকে শক্তি ফাউন্ডেশনের ত্রাণ বিতরণ নাইক্ষ্যংছড়িতে পাহাড় ধ্বসে শিশুসহ একই পরিবারের আহত ৪ বাান্দরবানে কর্মরত সাংবাদিকদের সাথে বাল্যবিবাহ নিরোধকল্পে বিষয়ে ওরিয়েন্টেশন করল গ্রীনহিল দি মারমা কো অপারেটিভ ক্রেডিট ইউনিয়ন ৯ম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উদযাপন খাগড়াছড়ি মানিকছড়িতে মাশরুম চাষে সফল ইঞ্জিনিয়ার সানি মারমা বান্দরবান রাজার মাঠে শুরু হতে যাচ্ছে গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্ট আওয়ামীলীগের ত্রি- বার্ষিক সম্মেলন: সভাপতি মংপু ও সাঃ সম্পাদক নাছির পাহাড়ে কি নাম ধরে তারা আসছে সেটা আমাদের কাছে প্রাধান্য পাচ্ছে না- স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাঙ্গামাটি শহরে হঠাৎ দেখা মিলল ‘দাগি-বসন্ত’ পাখি বান্দরবান রাজার মাঠ সংলগ্ন পুকুর থেকে যুবকের লাশ উদ্ধার
লামায় ৩১টি ইটভাটার মাটি সংগ্রহে অর্ধশত পাহাড় কাটা হচ্ছে

লামায় ৩১টি ইটভাটার মাটি সংগ্রহে অর্ধশত পাহাড় কাটা হচ্ছে

মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম, বিশেষ প্রতিনিধি:

বান্দরবানের লামায় আগামী শুষ্ক মৌসুমকে লক্ষ্য করে ৩১টি ইটভাটা পরিবেশের বারটা বাজিয়ে চলমান বর্ষায় দেদারচ্ছে পাহাড় কাটার অভিযোগ উঠেছে। সরকারি কোন অনুমোদন ছাড়াই ফাইতং ইউনিয়নের ২৪টি অবৈধ ইটভাটা সহ বহাল তবিয়তে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে উপজেলার ৩১টি ইটভাটা। বান্দরবান জেলা প্রশাসক মো. আসলাম হোসেন জানিয়েছেন, অবৈধ ইট ভাটার বিষয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণে মোবাইল কোট পরিচালনা করা হবে।

ইটভাটার প্রধান কাঁচামাল পাহাড়ের মাটি। এই মাটি সংগ্রহ করার মূল সময় হচ্ছে বর্ষাকাল। উপজেলার ৩১টি ইটভাটার কাজে মাটি সংগ্রহ করতে গিয়ে ইতিমধ্যে ৩ শতাধিক ছোট-বড় পাহাড় বিলীন হয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন, লামা পৌরসভা, ফাইতং, সরই, গজালিয়া ও ফাঁসিয়াখালী এলাকার লোকজন।

সরজমিনে লামার ফাইতং এলাকার ঘুরে দেখা যায়, এই ইউনিয়নের ২৪টি ইটভাটার মাটি সংগ্রহ করতে গিয়ে প্রায় ২ শতাধিক পাহাড় ইতিমধ্যে বিলীন করে ফেলেছে। নতুন করে আরো অর্ধশত পাহাড় কাটা হচ্ছে। পাহাড়ি গ্রাম রাইম্যাখোলা, শিবাতলী পাড়া, মংব্রাচিং কারবারী পাড়া, ফাদু বাগান পাড়া, হেডম্যান পাড়া ও বাঙ্গালি পাড়ার অধিবাসীরা জানান, ইটভাটার অত্যাচার থেকে রক্ষা পেতে বান্দরবান জেলা প্রশাসকের বরাবর আবেদন করেও প্রতিকার পায়নি। বনজ সম্পদ ব্যবহারের সহজ লভ্যতা ও দূর্বল প্রশাসনিক তদারকির কারণে ফাইতং ইউনিয়ন অবৈধ ইটভাটা স্থাপনের নিরাপদ জোনে পরিণত হয়েছে।

অবাধে পাহাড় কাটার কারণে দিনের পর দিন বদলে যাচ্ছে পাহাড়ি এলাকা ফাইতংয়ের চেহারা। উঁচু উঁচু পাহাড়গুলো সমতল হচ্ছে। বৃক্ষগুলো উজাড় হতে হতে মরুময় হয়ে গেছে পুরো এলাকা। ভরাট হয়ে গেছে ছোট ছোট পাহাড়ি ছড়া ও খাল। কোথাও ফসলি জমি নেই। ফলের বাগান নেই। নেই বৃক্ষবাগান। বিরানভূমিতে রূপ নিয়েছে এই জনপদ।

বিশেষ করে ইউনিয়নের শিবাতলী পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ঘেঁষে গড়ে ওঠেছে ৩টি ইটভাটা। দুটি ভাটার মালিক বেলাল হোসেন ও অন্যটি মোহাম্মদ হুমায়ুনের। স্কুলটির প্রধান শিক্ষক মো. নেজাম উদ্দিন বলেন, বিদ্যালয়টি পাহাড়ের উপরে অবস্থিত। ইটভাটার মালিকরা স্কুলের চারপাশ ও খেলার মাঠের মাটি কেটে নিয়ে গেছে। শুধুমাত্র ভবনটি টিকে আছে কোনমতে। তারই মাঝে ভিতরে বসে ধোঁয়ার চোখ পোড়ানোর সঙ্গে যুদ্ধ করছে চলছে কোমলমতি শিশুদের লেখাপড়া।

উপজেলা প্রশাসনের তথ্য মতে, এই বছর লামার ফাইতং এলাকায় ২৪টি, ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নে ৪টি, লামা পৌরসভায় ১টি, গজালিয়ায় ১টি ও সরই ১টি সহ মোট ৩১টি ব্রিকফিল্ড রয়েছে। কোনটিরই সরকারী অনুমোদন বা লাইসেন্স নেই।

জানা গেছে, চরম পরিবেশ বিপর্যয়ের কারণে ফাইতং-এ ২০১৫ সালে পাহাড়ধসে ১৩ জনের মৃত্যু হয়। কিন্তু তাতেও টনক নড়েনি কারো। ইটভাটাকে নিরুৎসাহিত করতে ভূমিকা নিচ্ছে না স্থানীয় প্রশাসন। কয়েক গজের মধ্যেই পুলিশ ফাঁড়ি, বন বিভাগের বিট অফিসারের কার্যালয়, ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়। কিন্তু বন ও পাহাড় ধ্বংসের এমন হরিলুটের মাঝখানে বসে তারা নীরব ভূমিকা পালন করছেন।

ইটভাটা মালিক সমিতির সভাপতি কবির আহমদ জানিয়েছেন, ইটভাটার কাঁচামাল মাটি বর্ষাকালে সংগ্রহ করতে হয়। নভেম্বর মাসের শেষের দিক থেকে ইটভাটায় আগুন দেয়া হয় আর চলে মে-জুন মাস পর্যন্ত। আমাদের সরকারী অনুমোদন নেই তবে হাইকোর্টের একটি রিট মূলে ব্রিকফিল্ড গুলো চলছে।

ফাইতং ইউপি চেয়ারম্যান মো. জালাল আহমদ জানিয়েছেন, স্থানীয় ভূমি মালিকদের কাছ থেকে জমি লিজ বা ক্রয় করে ফাইতং ইউনিয়নে ইট ভাটা করা হচ্ছে। ২০১৫ সালে ফাইতং ইউনিয়নের ইটভাটাগুলোকে ব্যবসায়িক সনদ (ট্রেড লাইসেন্স) দেওয়া হলেও পরিবেশ বিনষ্টের আশঙ্কা এড়াতে ২০১৬ থেকে অদ্যাবধি কোন ট্রেড লাইসেন্স ইস্যু করা হয়নি।
লামা উপজেলার দায়িত্বরত পরিবেশ অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম অঞ্চলের পরিচালক মো. মুকবুল হোসেন জানিয়েছেন, বান্দরবান জেলায় সরকারের অনুমোদন প্রাপ্ত কোন ইট ভাটা নাই। পরিবেশ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে ইট ভাটা স্থাপনের জন্য কোন ছাড়পত্র প্রদান করা হয় নাই।

উপজেলা নির্বাহী অফিস সূত্রে জানা যায়, গত ৬ জুন ২০১৮ইং লামার ফাইতং এলাকায় অবাধে পাহাড় কাটার দায়ে তিন ব্রিকফিল্ডকে জরিমানা করা হয়েছে। ২০১৩ সালের ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইনের আওতায় তিনটি ইটভাটা মালিক মোঃ খায়ের উদ্দিন, পিং-আবুল কাশেম, সাং- পাগলি পাড়া কে ৫০ হাজার, মোঃ ইয়াছির আরাফাত, পিং-এনামুল হক, সাং- কাকারা কে ৩০ হাজার ও মোঃ গিয়াস উদ্দিন, পিং-মো কামাল উদ্দিন, সাং চকরিয়াকে ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও লামা উপজেলা নির্বাহী অফিসার নূর-এ-জান্নাত রুমি বলেন, ব্রিকফিল্ড সংশ্লিষ্ট সকলকে পরিবেশ সংরক্ষণ আইন যথাযথ পরিপালনের নির্দেশ প্রদান করেন। অন্যথায় আরো কঠোর আইনের প্রয়োগ করা হবে তিনি জানান।

ভালো লাগলে সংবাদটি শেয়ার করুন....

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *




© All rights reserved © 2018 Bandarban Pratidin.com
Design & Developed BY CHT Technology