শুক্রবার, ০১ ডিসেম্বর ২০২৩, ১১:১০ অপরাহ্ন
উথোয়াইচিং মারমাঃ
হিমেল হাওয়া আর ঘন কুয়াশায় কাঁপছে বান্দরবানের সদর ইউনিয়নের টংকাবতী ইউনিয়নের সিংক্রাট পাড়ার, রংকিন পাড়া এবং চিম্বুকের রাস্তার ধারে বুইট্র্যা পাড়া, পাইতুই পাড়া, ঙাংরাও পাড়া, নতুন রামজু পাড়া, সীতা পাড়া, রুইয়াং পাড়া, মারকিন পাড়া , মারকিন ২ পাড়া, সিংক্যাট পাড়া এবং অংবাইতং পাড়া গ্রামের দুঃস্থ পরিবারগুলো। গত কয়েকদিনের শৈত্যপ্রবাহে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন।
গত সপ্তাহ জুড়ে বলা যায় এই এলাকায় সূর্যের দেখাই মেলেনি। বুধবার (০৮জানুযারি) সকাল থেকে মেঘে ঢাকা ঘন কুয়াশা সহ বইছে হিমেল হাওয়া। তারই সাথে তীব্র শীতে চরম দুর্ভোগে পড়েছে খেটে খাওয়া মানুষ।
এদিকে বান্দরবানের জেলা উপজেলায় ঠান্ডার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে শীতজনিত নানা রোগ। বান্দরবান সদর হাসপাতালের আর এম ও ডাঃ প্রত্যুষ পল ত্রিপুরা জানান, গত কযেকদিনে দিনে ডায়রিয়া, নিউমোনিয়াম, হাঁপানি, অ্যাজমা, হৃদরোগসহ নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে জেলার সদর হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে শিশুসহ ৪০জন।
শীতে বান্দরবানের পার্শ্ববতী ইউনিয়ন টংকাবতী এলাকায় সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে রয়েছে পাহাড় বেষ্টিত ম্রো সম্প্রদায়ের গরীব অসহায়, দুঃস্থ, নিম্ন আয়ের মানুষজন। গবাদিপশুও রেহাই পাচ্ছে না শীতের প্রকোপ থেকে।
বুধবার (০৮.০১.২০২০) সকালে জেলার টংকাবতী ইউনিয়ন সহ চিম্বুক রাস্তার ধারে পাড়া এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে, এলাকার খেটে খাওয়া মানুষরা কাজকর্ম না পেয়ে খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন। প্রয়োজন ছাড়া কেউ ঘর থেকে বের হচ্ছে না। এলাকার খেটে খাওয়া মানুষ কাজকর্ম না পেয়ে পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছে। এতে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। মানুষগুলো শীতবস্ত্রের অভাবে কষ্ট পোহাচ্ছে। শীতার্ত মানুষগুলো এক টুকরো গরম কাপড়ের জন্য তাকিয়ে আছেন সরকারী-বেসরকারী সংস্থাসহ সমাজের বিত্তবানদের দিকে। বিশেষ করে বাচ্চা শিশুদের গায়ে দেখা মেলেনি শীত নিবারণের এক টুকরো শীতবস্ত্র।
টংকাবতী ইউনিয়ন ৮নং ওয়ার্ডের সিংক্রাট পাড়ার কারবারী (গ্রাম প্রধান) মেনপই ম্রো (৬০)বলেন, পাহাড়ের এই পাড়ায় ৬০বছর যাবত বাস করে আসছি। পাড়ার পরিবার সংখ্যা ১০ পরিবার। জনসংখ্যা শিশু সহ মোট ৪৫জন। এ বছরের শুরু থেকে শীতে খুব কষ্ট পাচ্ছি। এখনো পর্যন্ত সরকারি বা বেসরকারী কোন সংস্থা ও বিত্তবান কারো কাছ থেকে কোন শীতবস্ত্র বা একটা কম্বলও পাইনি। আজ সহ দুইদিন হলো কাজে বের হতে পারছিনা। তাই পরিবার নিয়ে কষ্টে আছি।
একই পাড়ার বাসীন্দা ঙানওয়াই ম্রো(২৯) বলেন, আমাদের পাড়াবাসীরা এতই গরীব যে নিজেদের শীত নিবারণের জন্য ভালো কোন কাপড় নেই। তার চেয়ে বড় বিষয় হলো বাচ্চাদেরকে শীত নিবারণের মতো ভালো কোন গরম কাপড় নেই। গত দুদিন আগেও পাড়ার ৩মাস বয়সী ও আড়াই বছর বয়সী বাচ্চা ২জনকে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে বান্দরবান সদর হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নেয়া হয়েছে।
একই ইউনিয়নের পার্শ্ববর্তী গ্রাম রংকিন পাড়ার কারবারী(পাড়া প্রধান) মেনরুম ম্রোা (৪৬)সহ পাড়ার বয়োজ্যষ্ঠরা বলেন, আমাদের পাড়ায় ৭পরিবারে শিশু সহ মোট জনসংখ্যা ৩৬জন। সরকারী ভাবে ২/৩ পরিবার ভিজিডি/ভিজিএফ সহায়তা পেলেও শীত নিবারণের জন্য সরকারী বা বেসরকারী ভাবে শীতবস্ত্র পাওয়া হতে বঞ্চিত হয়ে আছি।তাই সরকারী-বেসরকারী সংস্থাসহ সমাজের বিত্তবানদের কাছে আমদের চাওয়া শিশু ও বয়োবৃদ্ধদের কথা চিন্তা করে শীতবস্ত্র দেয়ার ব্যবস্থা করে দিলে এই শীতের কষ্ট থেকে আমরা রেহাই পাবো।
টংকাবতী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান প্লুকান ম্রো বলেন, গত ২০১৯ইং সালের ডিসেম্বরের শীতের প্রথম দিকে সরকার হতে পাওয়া ৪৬৮পিস কম্বল টংকাবতী ইউনিয়ন মেম্বারদের মাধ্যমে যার যার ওর্য়াডের এলাকায় বিতরণের জন্য দিয়ে দেয়া হয়েছে। কিন্তু সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সিংক্রাট পাড়ার অতি গরীব ,দুঃস্থ পরিবারের কেউই শীত বস্ত্র পায়নি। তিনি আরো বলেন, তবে এ ইউনিয়নের মোট জনসংথ্যা প্রায় ৯হাজার।যা সরকার থেকে পাওয়া শীতবস্ত্র এখানকার গরীব, দুঃস্থদের জন্য পর্যাপ্ত নয়।
তিনি আরো জানান, টংকাবতী চেয়ারম্যান আর মেম্বারদের সমন্বয়ে ১০/১২ দিনের মধ্যে নিজেদের উদ্যোগে ঐসব পাড়ার পরিবার গুলোকে কিছু শীতবস্ত্র দেয়ার ব্যবস্থা করা হবে।
টংকাবতী ইউনিয়নের কয়েকজনের সাথে কথা বলে জানা যায়, ২০১৮ইং সালে বিএনকেএস বেসরকারী একটি সংস্থা শীতবস্ত্র দেয়ার পর থেকে আর কোন বেসরকারী সংস্থা এধরণের উদ্যোগ নিয়ে এগিয়ে আসেনি এ পর্যন্ত।
এদিকে টংকাবতী ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ড এর মেম্বার সাকরুই ম্রো কে অনেকবার মুঠোফোনে সিংক্রাট পাড়ার বিষয় নিয়ে জানার জন্য যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি।
বান্দরবানের পিআইও মোঃ ময়নুল ইসলাম কে বক্তব্য নেয়ার জন্য অফিসে গিয়ে না পেয়ে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, রোয়াংছড়ি উপজেলায় এক জরুরি মিটিং এ আছেন। মিটিং শেষে ফোন করার কথা দিয়েও আর কোন যোগাযোগ রাখেননি।
বান্দরবানের সিভিল সার্জন ডাঃ অংসুইপ্রু মারমা অফিসের কাজে ঢাকায় অবস্থান করার কারণে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে জানান, শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে বান্দরবান সদর হাসপাতালে শিশু ও বয়স্ক রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। তার মধ্যে বেশির ভাগই দূর্গম এলাকার শিশু ও বয়স্ক বেশি।
বান্দরবান সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা নোমান হোসেন প্রিন্স জানান, শীত বস্ত্র দেয়া হয়েছে প্রত্যেক ইউনিয়ন চেয়ারম্যানদের হাতে। ওনাদের হাতে তালিকা আছে। সেই অনুযায়ী চেয়ারম্যানরা দিয়ে থাকে। সরকার তো দেখা যাচ্ছে সব কিছু দিচ্ছে। চেয়ারম্যানদের তালিকায় যদি নাম থাকে তাহলে ঐ পাড়ার মানুষ তো পাওয়ার কথা। আর যদি বিশেষ ভাবে যদি বিষয়টি জরুরি হয়ে থাকলে তাহলে চেয়ারম্যান বিষয়টি ব্যবস্থা নিতে পারবে।
Leave a Reply