শুক্রবার, ০১ ডিসেম্বর ২০২৩, ০২:২৮ পূর্বাহ্ন
জসাইউ মার্মাঃ
শান্তিপ্রিয় এবং সম্প্রীতির বান্দরবান পার্বত্য জেলা। বিভিন্ন জায়গায় আমরা এই শব্দগুলো বেশি ব্যবহার করে থাকি। সম্প্রতি সময় অপহরণ, গুম ও একের পর এক হত্যার ঘটনায় “শান্তি এবং সম্প্রীতির বান্দরবান” এই বাক্যটি কটতুকু বাস্তবায়ন হয়েছে ? অস্ত্রের ঝনকানি আওয়াজে সাধারণ মানুষের মৃত্যু দূতের আগাম বার্তা দিচ্ছে। কারোর প্রাণের নিশ্চয়তা নেয়, যে কোন মুহুর্তে ধরে নিয়ে গিয়ে হত্যা করতে পারে । কেউ কী শান্তি বা সম্প্রীতি বিনষ্ট করছে অথবা ঘোলা জলে মাছ শিকার করছে? কিংবা পাহাড়ে আধিপত্য বিস্তারের জন্য গুম, হত্যা ও অপহরণ করছে ? এসব নানান ধরণের প্রশ্ন উঠে আসছে বান্দরবান বাসিদের মনে।
গত ৭ মে (১) বিনয় তংঞ্চঙ্গ্যাকে গুলি করে হত্যা এবং ফোরাধন তংঞ্চঙ্গ্যাকে অপহরণ করে নিয়ে যাওয়া , যার এখনো খোঁজ মেলেনি (২) ৯ মে কুহালং ৩নং রাবার বাগানে জয়মণি তংঞ্চঙ্গ্যাকে গুলি করে হত্যা (৩) ১৫ মে রোয়াংছড়ি উপজেলা আলেক্ষ্যং ইউনিয়নের সাধু হেডম্যান পাড়ার শান্তি লাল ত্রিপুরাসহ ২ জনকে গুলি করে হত্যা (৪) ১৮ মে রাজবিলা, তাঁইখালী ৮নং রাবার বাগান পাড়ার ক্যচিং থোয়াই মারমাকে গুলি করে হত্যা (৫) ২২ মে বান্দরবান পৌর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি চথোয়াই মং মারমাকে অপহরণ করে হত্যা (৬) ২৪ শে জুন সোমবার রোয়াংছড়ি উপজেলা অংথুই অং কে গুলি করে হত্যা করা হয়। একের পর এক হত্যা, অপহরণ ও গুম এর পিছনে কে বা কারা জরিত তা এখনো অন্ধকারে রয়ে গেছে। তবে আ:লীগ ও জেএসএস এই দুই দল একে অন্যের দোষারোপ করছে।
বান্দরবান সদর রাজবিলা ইউনিয়নের ৬ নম্বর, ৭ নম্বর, ৮ নম্বর, ৯ নম্বর, ১০ নম্বর রাবার বাগান পাড়া, তাঁইখালী, কুহালং তুংক্ষ্যং পাড়া, এবং রোয়াংছড়ি ইউনিয়ন এসব এলাকার বাসিন্দাদের চোখে ঘুম নেয় এবং সবার মনে এক ধরণের ভয় বিরাজ করছে। এক একটা রাত পার করা মানে মৃত্যুর হাত থেকে বেঁচে ফিরা। সন্ধ্যা নামলেই অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের আনাগোনা বেড়ে যায়। একের পর এক হত্যার হুমকির কারনে ঘর বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে বাড়ির পুরুষরা। এলাকাগুলো এখন পুরুষ শূন্য-এমনটি জানিয়েছেন পাড়াবাসিরা।
রাজবিলা ইউনিয়নের বাসিন্দা মেছোমা মারমা (ছদ্ম নাম) তিনি বলেন, সন্ধ্যা হলে দু মুঠো ভাত খেয়ে গ্রামের মহিলারা ছেলে-মেয়েদের নিয়ে একত্রিত হয়ে এক ঘরে রাত্রি যাপন করি। তাও আবার আধো নিদ্রায় ঘুম ভেঙ্গে যায়। আমরা আতঙ্কে দিন পার করছি। আমাদের এই সমস্যা সমাধান করার মত কেউ কী নেয় বান্দরবানে ? আমন ধান ও অন্যান্য শস্য ফলানোর সময়ে গ্রামে পুরুষ শূন্য হওয়ায় খাদ্য ও আর্থিক দিক দিয়ে প্রচুর ক্ষতি সম্ভাবনা রয়েছে। জুম বা শস্য আবাদ করে যা পায় তা দিয়ে বছর চলে। এভাবে চলতে থাকলে সংসার ও ছেলে মেয়েদের লেখাপড়া অনিশ্চিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এভাবে আর কতদিন চলবে? আমরা চায় আমাদের স্বামী, ছেলেরা নিরাপদে বাড়িতে ফিরে আসতে পারে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পালিয়ে বেড়ানো কয়েক জনের সাথে কথা বলে জানা গেছে, আমরা আওয়ামী লীগ রাজনীতি করি বলে আজ পরিবার ও এলাকা ছাড়া হয়েছি। বার বার হত্যার হুমকি আসছে। এভাবে আর কত দিন পালিয়ে বেড়াবো। মাঝে মধ্যে মনে হয় আত্মাহত্যা করে ফেলি। দুই মাস হলো বাড়িতে যেতে পারছি না। আয় রোজগার নেয়, ছোট ছোট ছেলে মেয়েদের স্কুলের খরচ ও সংসারের খরচ কে যোগান দিবে। আমাদের আয়ের উৎস হচ্ছে জুম চাষ এবং বিভিন্ন ফলজ চাষ। এসব করে সংসার চলে। এখন শস্য ফলানোর সময়, এমন সময়ে আমরা পালিয়ে বেড়াচ্ছি। আমাদের মত রাজবিলা ইউনিয়নের শত শত পুরুষ আজ এলাকা ছাড়া। এলাকায় শান্তি স্থাপন এবং নিজ এলাকায় যাতে নিরাপদে ফিরে যেতে পারি তার জন্য স্থানীয় প্রশাসন ও মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং সহযোগিতা কামনা করছি।
Leave a Reply