শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ০৮:১৯ অপরাহ্ন
অংগ্য মারমা; খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি:
বগুড়ার সান্তাহার গ্রামের মো. রমজান আলী ও শরিফা খাতুনের শিশু মো. আবদুর রহমান ওরফে শরিফুল ইসলাম(৮)দুই বছর আগে মায়ের সাথে অভিমান করে বাড়ি থেকে বের হয়। পথ হারিয়ে যাওয়া রহমান সঠিক ঠিকানা বলতে না পারা এবং আশ্রয়দাতারা আন্তরিক না হওয়ার কারণে দীর্ঘ দিন নানা লাঞ্চনা-বঞ্চনার শিকার রহমান অবশেষে মানিকছড়ি এসে স্থানীয় সচেতন ব্যক্তি ও পুলিশের সহযোগিতায় মায়ের দেখা পেয়ে আনন্দে আত্মহারা! দীর্ঘদিন পর মা-ছেলের দেখার দৃশ্য এবং ঘটনা যেন সিনেমার কাহিনীকেও হার মানিয়েছে।
মানিকছড়ি থানা পুলিশ ও শিশু রহমানের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ২০১৬ সালে শিশু রহমানের মা শরিফা খাতুন শিশু একদিন পড়ালেখার জন্য বকাঝকা করলে শিশু রমহান রাগে-ক্ষোভে বাড়ি থেকে বের হয়ে যায়। প্রথমে সে রেল স্ট্রেশনে গিয়ে ট্রেনে বগুড়ায় আসে। পরে আবার মা-বাবার কাছে যাওয়ার উদ্দেশ্যে ট্রেনে উঠে ভূলবশত রাজশাহী চলে যায়। সেখানে গেলে জনৈক ব্যক্তি তাকে নাম,ঠিকানা জিজ্ঞাস করলে রহমান নাম, পিতা ও মাতা এবং গ্রামের বললেও থানার নাম বলতে পারেনি। এতেই তার জীবনে বিপত্তী ঘটে। পরে জনৈক ব্যক্তি তাকে ট্রেনে করে চট্টগ্রাম নিয়ে আসে। কিছুদিন পর শিশু রহমানকে তুলে দেওয়া হয় সমাজ সেবা অধিদপ্তরের অধিনস্থ শিশু কেন্দ্রে। সেখানে শিশু রহমানের ক্রমিক নং ৬২০। কিন্তু সেখানেও শিশু রহমান মানসিক ভাবে সুস্থ ছিল না। মা-বাবার কাছে ফিরে যেতে সারাক্ষণ ছিল ছটপটে।
এদিকে শিশু রহমানকে বকাঝকা করার কারণে বাবা মো. রমজান আলী স্ত্রীর সাথে অভিমান করে গত দেড় বছর ধরে সেও স্ত্রীকে ফেলে নিরুদ্দেশ! ফলে শিশু রহমানের মা শরিফা খাতুন এর জীবনে নেমে আসে চরম বিপত্তি!
শিশু রহমান ঈদ উল ফিতরের ১ সপ্তাহ পর (২৩/২৪ জুন) রাতে কৌশলে শিশু কেন্দ্র থেকে পালিয়ে আবার পথ হারায়। এক পর্যায়ে অজ্ঞাত ব্যক্তিরা গত ২৬ জুন তাকে মানিকছড়ি বড়ডলু গ্রামে গাড়ি থেকে নামিয়ে দেয়। শিশু রহমান রাস্তার পাশে বসে কান্নাকাটি করলে লোকজন তাকে অন্যত্র পাঠিয়ে দিতে এলাকার বিজ্ঞ রাজনীতিবিদ ও শিক্ষানুরাগী এম.ই. আজাদ চৌধুরী বাবুলের নিকট পরামর্শ চাইলে তিনি শিশুটি দেখতে ছুটে আসেন এবং মা-বাবা হারা শিশুর কান্না শুনে বিষয়টি মানিকছড়ি থানা অফিসার ইনচার্জ মুহাম্মদ রশীদকে অবহিত করেন। পরে পুলিশ বিষয়টি আমলে নিয়ে শিশুটিকে থানায় এনে আদর যতেœ শিশুর গ্রামের ঠিকানা,মা-বাবার পরিচয় জানতে চাইলে শিশু রহমান শুধু গ্রামের নাম সান্তাহার,মা-বাবার নাম ছাড়া আর কিছুই বলতে না পারায় পুলিশ বিষয়টি নিয়ে সামনে এগুতে থাকে এবং এক পর্যায়ে বগুড়া জেলার আদমদীঘি থানাস্থ সান্তাহার গ্রাম শনাক্ত করলে ওই থানার পুলিশ শিশুটির বাড়ী খুঁজে পায়। পরে শিশু আবদুর রহমানের মা শরিফা খাতুন বেকুল হয়ে শিশু’র কাছে ছুঁটে আসেন!
দীর্ঘ দুই বছর পর হারানো ছেলে মো. আবদুর রহমান ওরফে শরিফুল ইসলাম(৮)কে ফিরে পেয়ে মা শরিফা খাতুন স্বামীর অবহেলা,নির্যাতন ভূলে যান এবং যারা শিশুটি তার বুকে ফিরিয়ে দিয়েছে তাঁদের জন্য মন খুলে দোয়া করেন। ২৯ জুন সকাল ১০.৩০ ঘটিকার সময় মানিকছড়ি থানা অফিসার ইনচার্জ মুহাম্মদ রশীদ এর অফিস কক্ষে এ প্রতিবেদকের সাথে কথা হয় বগুড়া জেলার আদমদীঘি থানার সান্তাহার গ্রামের গৃহীনি এবং শিশু আবদুর রহমান ওরফে শরিফুল ইসলাম এরম া শরিফা খাতুনের সাথে। শিশুটিকে ফিরে পেয়ে মা আনন্দের কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন এবং যারা পুত্রকে বুকে ফিরে পেতে সহযোগিতা করেছেন তাঁদেরকে অভিনন্দন জানান। আজই শিশু রহমানকে নিয়ে মা শরিফা খাতুন বগুড়ায় ফিরে যাবেন। এ রির্পোট লেখা পর্যন্ত (দুপুর ১২টা) পুলিশ শিশুটিকে বুঝিয়ে দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিল।
Leave a Reply