রবিবার, ১৭ জানুয়ারী ২০২১, ১২:৩২ অপরাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
অর্থের প্রয়োজনে ইটভাটা এবং ইটভাটর প্রয়োজনে পাহাড়ি মাটি এ দুইয়ের যোগসূত্র এখন অবিচ্ছিন্ন। ইটভাটার লেলিহান শিখায় মুনাফালেপভী ইটভাটার মালিকরা জ্বালিয়ে দিচ্ছে ফাইতং এর সবুজ বনভূমি ও চোখ জুড়ানো প্রাকৃতিক পরিবেশ। কেড়ে নিচ্ছে মানুষের অনাবিল শান্তি হরণ করছে স্বস্তি।
আইনের উর্ধ্বে কেউ নয়। ইটভাটার মালিকরা পরিবেশ অধিদপ্তর আইন মানছে কি? এই আইনের বাস্তবায়নকারি সংস্থাদের পদক্ষেপ গ্রহন করেছে কি? নানান প্রশ্ন এখন ফাইতং স্থানীয়বাসিদের মনে।
ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০১৩
২০১৩ সনের ৫৯ নং আইন ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন সংক্রান্ত কর্মকা- নিয়ন্ত্রণের জন্য বিদ্যমান আইন রহিতক্রমে কতিপয় সংশোধনীসহ উহা পুনঃপ্রণয়নের উদ্দেশ্যে প্রণীত আইনঃ
লাইসেন্স ব্যতীত ইট প্রস্তুত নিষিদ্ধ। আপাতত বলবৎ অন্য কোন আইনে যাহা কিছুই থাকুক না কেন, ইটভাটা যে জেলায় অবস্থিত সেই জেলার জেলা প্রশাসকের নিকট হইতে লাইসেন্স গ্রহণ ব্যতিরেকে, কোন ব্যক্তি ইটভাটায় ইট প্রস্তুত করিতে পারিবেন না :
মাটির ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ ও হ্রাসকরণ।
(১) আপাতত বলবৎ অন্য আইনে যাহা কিছুই থাকুক না কেন, কোন ব্যক্তি ইট প্রস্তুত করিবার উদ্দেশ্যে কৃষিজমি বা পাহাড় বা টিলা হইতে মাটি কাটিয়া বা সংগ্রহ করিয়া ইটের কাঁচামাল হিসাবে উহা ব্যবহার করিতে পারিবেন না। (২) যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ব্যতীত, কোন ব্যক্তি ইট প্রস্তুত করিবার উদ্দেশ্যে মজা পুকুর বা খাল বা বিল বা খাঁড়ি বা দিঘি বা নদ-নদী বা হাওর-বাওর বা চরাঞ্চল বা পতিত জায়গা হইতে মাটি কাটিতে বা সংগ্রহ করিতে পারিবে না। (৩) ইটের কাঁচামাল হিসাবে মাটির ব্যবহার হ্রাস করিবার উদ্দেশ্যে আধুনিক প্রযুক্তির ইটভাটায় কমপক্ষে ৫০ (পঞ্চাশ) শতাংশ ফাঁপা ইট ( Hollow Brick) প্রস্তুত করিতে হইবে।
৯৯৩০ বাংলাদেশ গেজেট, অতিরিক্ত, নভেম্বর ২০, ২০১৩ (৪) স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর কর্তৃক নির্মিত উপজেলা বা ইউনিয়ন বা গ্রামীণ সড়ক ব্যবহার করিয়া কোন ব্যক্তি ভারি যানবাহন দ্বারা ইট বা ইটের কাঁচামাল পরিবহন করিতে পারিবেন না। ৬। জ্বালানী কাঠের ব্যবহার নিষিদ্ধ। আপাতত বলবৎ অন্য কোন আইনে যাহা কিছুই থাকুক না কেন, কোন ব্যক্তি ইটভাটায় ইট পোড়ানোর কাজে জ্বালানি হিসাবে কোন জ্বালানি কাঠ ব্যবহার করিতে পারিবেন না।
(খ) বিভাগীয় বন কর্মকর্তার অনুমতি ব্যতীত, সরকারি বনাঞ্চলের সীমারেখা হইতে ২ (দুই) কিলোমিটার দূরত্বের মধ্যে; (গ) কোন পাহাড় বা টিলার উপরিভাগে বা ঢালে বা তৎসংলগ্ন সমতলে কোন ইটভাটা স্থাপনের ক্ষেত্রে উক্ত পাহাড় বা টিলার পাদদেশ হইতে কমপক্ষে ১ ২ (অর্ধ) কিলোমিটার দূরত্বের মধ্যে; (ঘ) পার্বত্য জেলায় ইটভাটা স্থাপনের ক্ষেত্রে, পার্বত্য জেলার পরিবেশ উন্নয়ন কমিটি কর্তৃক নির্ধারিত স্থান ব্যতীত অন্য কোন স্থানে; বাংলাদেশ গেজেট, অতিরিক্ত, নভেম্বর ২০, ২০১৩ ৯৯৩১ (ঙ) বিশেষ কোন স্থাপনা, রেলপথ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল ও ক্লিনিক, গবেষণা প্রতিষ্ঠান, বা অনুরূপ কোন স্থান বা প্রতিষ্ঠান হইতে কমপক্ষে ১ (এক) কিলোমিটার দূরত্বের মধ্যে; এবং (চ) স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর কর্তৃক নির্মিত উপজেলা বা ইউনিয়ন বা গ্রামীণ সড়ক হইতে কমপক্ষে ১ ২ (অর্ধ) কিলোমিটার দূরত্বের মধ্যে।
যদি কোন ব্যক্তি ধারা ৬ লঙ্ঘন করিয়া ইটভাটায় ইট পোড়ানো কাজে জ¦ালানি কাঠ ব্যবহার করেন, তাহ হইলে তিনি অনধিক ৩ (তিন) বৎসরের কারাদন্ড বা অনধিক ৩(তিন) লক্ষ টাকা অর্থদন্ড বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হইবে।
জ্বালানী কাঠের ব্যবহার নিষিদ্ধ।
আপাতত বলবৎ অন্য কোন আইনে যাহা কিছুই থাকুক না কেন, কোন ব্যক্তি ইটভাটায় ইট পোড়ানোর কাজে জ্বালানি হিসাবে কোন জ্বালানি কাঠ ব্যবহার করিতে পারিবেন না।
সরকার হারাচ্ছে রাজস্বঃ
ইটভাটা মালিকেরা সরকারের প্রাকৃতিক সম্পদ নষ্ট করছে এবং লুটেপুটে খাচ্ছে। সরকার প্রতি বছর বিপুল পরিমান রাজস্ব হারাচ্ছে।
স্থানীয় ও পরিবেশ উপর প্রভাবঃ
ইট ভাটার মালিকেরা স্থানীয় পাহাড়িদেরকে লোভ দেখিয়ে এককালীন অল্প কিছু টাকা দিয়ে চাষাবাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ জমি, পাহাড়, ঢিলা মাটি কেটে নিয়ে যায় ইট তৈরীর কাজে ব্যবহার করছে।
সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, শস্য ক্ষেত, বিভিন্ন ফলজ বাগান ইটভাটার ধুলাবালিয় ঢেকে যাওয়ায় ভালো ফলন হচ্ছে না। শুধু তাই নয় রান্না করতে শুকনো কাঠ এখন পাহাড়ে পাওয়ায় যাচ্ছে না। বিশেষ করে নারীরা খাল, ঝিরি, নদীতে মাছ ধরতে যেতে ভয় পাচ্ছে নিরাপত্তার কারনে। প্রত্যেক দিন ৫০/৬০টি ইট বোঝা ট্রাক গ্রামীণ রাস্তায় যাওয়া আসা করায় গ্রামীণ উন্নয়ন কাঠামো রাস্তাঘাট নষ্ট হচ্ছে। খনাখন্ড ও এবড়ো-খেবড়ো গ্রামীণ রাস্তায় শিশু, বয়স্ক ও রোগীদের চরম ভোগান্তিতে পরতে হয়।
তাহলে কি ইটভাটার মালিকেরা আইনকে তোয়াক্কা করছে না। এগুলো আইনের পরিপন্থি নয় কি?
Leave a Reply