শুক্রবার, ০৯ Jun ২০২৩, ০২:০২ অপরাহ্ন
আব্দুর রশিদ, নাইক্ষ্যংছড়ি প্রতিনিধিঃ
বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার বাইশারী ইউনিয়নের দূর্গম পাহাড়ী জনপদের একমাত্র জ্ঞানের আলো ছড়ানোর মাধ্যম থিমছড়ি বেরসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়। নানা সমস্যার অন্তরালে নিহীত রয়েছে বিদ্যালয়টি। দীর্ঘ ৭ বছরেও সরকারের স্বীকৃতি মিলেনি। সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত এবং বিনা বেতনে পাঠদান দিয়ে যাচ্ছে শিক্ষক শিক্ষিকারা। এ কথা গুলো জানালেন, বিদ্যালয়টির সভাপতি মোঃ জসিম উদ্দীন।
২০১৩সালে দূর্গম জনপদে ঝরেপড়া শিক্ষার্থীদের কথা চিন্তা করে তাৎকালীন ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ মুিনরুল হক (মনু), স্থানীয়দের সাথে পরামর্শ করে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠান করেন বলে জানালেন, বিদ্যালয়ের সাবেক সভাপতি মোঃ আবদুর রশিদ। তিনি আরো জানান, বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার পর থেকে মাত্র একটি বছর ইউএনডিপি ও গ্রাম উন্নয়ন সংগঠন (গ্রাউস) দু’জন শিক্ষকের এক বছর যাবৎ দু’হাজার টাকা করে সম্মানী প্রদান করে ছিলেন। তাও এখন বন্ধ হয়ে গেছে। পাঁচজন শিক্ষক বিনা বেতনেই দীর্ঘ সাত বছর যাবৎ পাঠদান দিয়ে যাচ্ছে।
সরজমিনে এই প্রতিবেদক বিদ্যালয়টিতে গিয়ে শিক্ষক, শিক্ষিকা, অভিভাবক, ও পরিচালনা কমিটির সাথে কথা বলে জানা যায়, বর্তমানে উক্ত বিদ্যালয়ে দেড় শতাধিক ছাত্র,ছাত্রী রয়েছে। বিদ্যালয়টি গাছের খুঁটিও টিন দিয়ে তৈরী যাহা বর্তমানে জরাজীর্ণ অবস্থা। যেকোন সময় ধসে পড়ে দূর্ঘটনার আশংকা রয়েছে। একটি মাত্র টিনসেট জায়গায় সল্পতা কারনে ছাত্র,ছাত্রীরা গাদাগাদিভাবে বসে পাঠদান করতে হচ্ছে। তার পরেও বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি সদস্যদের অক্লান্ত পরিশ্রমের এবং শিক্ষক,শিক্ষিাদের মানসম্মত পাঠদানের ফলে প্রতি বছরই ভাল ফলাফল অর্জন করছে ছাত্র-ছাত্রীরা।
বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক জন্নাতুল ফেরদাউস জানান, বর্তমানে অত্র বিদ্যালয়ে নিয়মিত পাঁচজন শিক্ষক রয়েছে। তৎ মধ্যে চার জন নারী ও একজন পুরুষ শিক্ষক। সকলেই বিনা বেতনে পাঠদান দিয়ে যাচ্ছি।
উপজেলার বাইশারী ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ড পাহাড়ী এলাকায় জন বিচ্ছিন্ন একটি গ্রামে বিদ্যালয়টির অবস্থান। বিদ্যালয় হইতে উভয় পাশের ৪ কিলোমিটারের মধ্যে কোন ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নেই। পায়ে হেঁটে যাওয়া ছাড়াও বিকল্প আর কোন উপায় নেই। বর্ষা মৌসুমে কাঁদা মাটির উপর দিয়ে এবং পাহাড়ী ছড়া ও পাহাড় বেঁয়ে বিদ্যালয়ে যেতে হয়। তবে ঐ বিচ্ছিন্ন এলাকায় পাহাড়ী বাঙ্গালী মিলে এবং রাবার বাগানের শ্রমিকদের নিয়ে কয়েকটি গ্রামের শতাধিক বাড়িঘর রয়েছে। এই এক মাত্র বিদ্যালয়টিই ঐ এলাকায় বসবাসরত লোকজনের ছেলে মেয়েদের শিক্ষার আলো ছড়ানোর একমাত্র প্রতিষ্ঠান। সব মিলিয়ে উক্ত বিদ্যালয়টি ছাড়া অবহেলিত জনপদের লোকজনের ছেলে সন্তাদের শিক্ষা দেওয়ার মতন আর কোন বিকল্প উপায় নেই।
স্থানীয় ইউপি সদস্য আব্দুর রহিম জানান, তিনি নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে বিদ্যালয়টির বিষয়ে খোঁজ খবর রাখছেন। দূর্গম জন বিচ্ছিন্ন পাহাড়ী এলাকার ছেলে মেয়েদের কথা চিন্তা করে বিভিন্ন প্রকল্প ও কর্মসূচীর মাধ্যমে বর্তমানে একটি কাঁচা রাস্তাও তৈরী করেছেন। পাশাপাশি বিদ্যালয়টির নানা সমস্যার ব্যাপারে তিনি ইউপি চেয়ারম্যানকে অবহিত করেছেন।
ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ আলম কোম্পানী জানান, থিমছড়ী বেসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বিষয়টি তিনি অবগত আছেন। বিদ্যালয়টিতে কোন ধরনের শিক্ষক, শিক্ষিকারা বেতন ভাতা না পাওয়ায় তিনি বিগত ঈদের সময় সকল শিক্ষকদের ঈদ বোনাস হিসাবে কিছু নগদ অর্থ প্রদান করেছেন। আগামীতেও সরকারী সুযোগ সুবিধা পাওয়া গেলে বরাদ্ধ দিয়ে সমস্যা গুলো সমাধানের চেষ্টা করা হবে। স্থানীয় লোকজন বিদ্যালয়টির বিষয়ে মাননীয় পার্বত্য মন্ত্রী বাবু বীর বাহাদুরের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন।
Leave a Reply