শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ০৪:৪৩ পূর্বাহ্ন
আলীকদম প্রতিনিধিঃ
বান্দরবানের আলীকদমে ২০১৯-২০ অর্থবছরের এলজিএসপি’র ৪ লাখ ৫০ হাজার টাকায় যাত্রী ছাউনীর নাম দিয়ে মাতামুহুরী রিজার্ভ এলাকায় নির্মিত ব্যক্তিগত টুরিষ্ট ষ্পট (অবৈধ ভিউ পয়েন্ট) ভেঙ্গে দিল লামা বন বিভাগ।
বুধবার এগারটায় লামা বন বিভাগের বিশেষ অভিযান দল এ অভিযান পরিচালনা করে। এসময় নির্মানাধীন একটি ভিউ পয়েন্ট ও আশেপাশে রক্ষিত নির্মান সামগ্রী তচনছ করে দেয়।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৪নং কুরুক পাতা ইউনিয়ন দুই কিস্তিতে এলজিএসপি থেকে ৪২ লাখ টাকা বরাদ্ধ পায়। একই অর্থ বছরে উপজেলার অপর তিন ইউনিয়ন বরাদ্ধ পায় সর্বমোট ৪০ লক্ষ টাকা। এলজিএসপি’র ২য় কিস্তির টাকায় “কুরুক পাতা পাহাড়ের উপরে রাস্তার পাশে যাত্রী চাউনী নির্মান” নামে প্রকল্প অনুমোদন নেয় সংশ্লিষ্ঠ ইউপি চেয়ারম্যান ক্রাতপুং ম্র্রো। মূলত সরেজমিনে ওই প্রকল্পের কোন অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। অপরদিকে কুরুক পাতা পাহাড়ের উপরে ওই টাকা দিয়ে রোমাঞ্চকর “ভিউ পয়েন্ট” নির্মান করছে সংশ্লিষ্ঠ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ক্রাতপুং ম্রো।
স্থানীয়রা জানায়, চেয়ারম্যান সরকারি টাকায় নিজস্ব ব্যবসা সম্প্রসারনের জন্য পর্যটন ষ্পট নির্মান করছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ইউপি সদস্য জানান, যেকোন প্রকল্প বরাদ্ধ আসলে চেয়ারম্যান প্রকল্পের টাকার অংক বা বরাদ্ধ সম্পর্কে আমাদেরকে কিছু জানায়না। আমাদেরকে নামে মাত্র প্রকল্প দেওয়া হয়, যা আমরা সম্পন্ন করা পর্যন্ত আমাদের দায়িত্ব শেষে হয়ে যায়।
জানতে চাইলে ক্রাতপুং চেয়ারম্যান ঘটনার সত্যতা এড়িয়ে যেতে চাইলেও সাংবাদিকের প্রশ্নের চাপে স্বীকার করতে বাধ্য হন যে, পর্যটকরা আসলে তারা যাতে থাকতে পারে তার জন্য আমি এই কাজটি করেছি। তিনি এটাও স্বীকার করেন যে, “কুরুক পাতা পাহাড়ের উপরে রাস্তার পাশে যাত্রী চাউনী নির্মান” নামে আমি প্রকল্পটি নিয়েছি। বন বিভাগ আমাকে না জানিয়ে স্থাপনাটি ভেঙ্গে দিয়েছে। অপর একটি প্রশ্নের উত্তরে, সংরক্ষিত বনাঞ্চলে কোন স্থাপনা করতে গেলে বনবিভাগের অনুমতি নিতে হয় এটা তিনি স্বীকার করেন। এসময় তাহার কাছে বনবিভাগের অনুমতি নিয়ে এটা তৈরি করছেন কিনা জানতে চাইলে অনুমতি নেয়া হয়নি এবং বনবিভাগকে এ বিষয়ে জানাননো হয়নি বলে তিনি স্বীকার করেন।
বিষয়টি নিশ্চিত করে লামা বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা এস এম কায়ছার বলেন, “১৯২৭ সালের বন আইনের ২৬(১)ঘ ধারায় বলা আছে সংরক্ষিত বনাঞ্চলে পূর্ব অনুমতি ব্যতিত কোন ব্যক্তি প্রবেশ করিতে পারিবেনা”। সেক্ষেত্রে একটি সংরক্ষিত বনাঞ্চলে কোন প্রকার স্থাপনা নির্মান করার কোন সুযোগ নেই। এক্ষেত্রে বন আইন লঙ্গিত হওয়ায় আমরা স্থাপনাটি ভেঙ্গে দিয়েছি।
উল্লেখ্য যে, দেশের অন্যতম বৃহৎ সংরক্ষিত বনাঞ্চল সাঙ্গু ও মাতামুহুরী রিজার্ভ ফরেষ্ট। দীর্ঘদিন ধরে গাছপালা কর্তন, পাথর উত্তোলন ও বিভিন্ন ধরনের স্থাপনা নির্মানের কারণে এই বনাঞ্চল প্রায় ধংসের পথে। বনাঞ্চল ধংসের কারণে প্রতিনিয়তই বাড়ছে প্রাকৃতিক দুর্যোগ। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক দুর্যোগ প্রসমন দিবসে এবিষয়ে বিষধ আলোচনা করা হলেও বাস্তবে সরেজমিনে তার দেখা মেলা ভার।
Leave a Reply