শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১১:৪৪ পূর্বাহ্ন
উথোয়াইচিং মারমা(রনি)ঃ
বান্দরবানে যথাযথ ধর্মীয় মর্যাদায় আর নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে আজ মঙ্গলবার বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের আষাঢ়ী পূর্ণিমা পালন করা হচ্ছে। এরই সাথে শুরু হয়েছে বর্ষাবাস। বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব আষাঢ়ী পূর্ণিমা। বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের কাছে এ পূর্ণিমা অত্যন্ত পবিত্র। বৌদ্ধদের অন্যতম সামাজিক, ধর্মীয় অনুষ্ঠান।
এ উপলক্ষ্যে এ দিনে দায়ক-দায়িকা গণ বিহারে সকাল থেকে বিভিন্ন খাবার দান করে থাকে। সন্ধ্যায় প্রদ্বীপ পূজাসহ ধর্মীয় রীতি-নীতি পালন করে থাকে।
গৌতম বুদ্ধ যেমন নিজ প্রচেষ্টায় জীবনের পূর্ণতা সাধন করে মহাবোধি বা আলোকপ্রাপ্ত হয়েছিলেন এবং জগৎজ্জ্যোতি বুদ্ধত্বপ্রাপ্ত হন তেমনিভাবে পূর্ণ চন্দ্রের মতো নিজের জীবনকে ঋদ্ধ করাই প্রতিটি বৌদ্ধের প্রচেষ্টা।
আষাঢ়ী পূর্ণিমার মধ্য দিয়ে বৌদ্ধরা এ প্রচেষ্টার প্রতি তাদের অঙ্গীকার নবায়ন করে থাকে। শুধু সাধারণ বৌদ্ধ না, ভিক্ষুদের জন্যও আষাঢ়ী পূর্ণিমা বিশেষ তাৎপর্য বহন করে। বৌদ্ধরা দিনটিকে শুভ আষাঢ়ী পূর্ণিমা হিসেবে অভিহিত করে থাকে।
পূর্ণিমাকে কেন্দ্র করেই যা গৌতম বুদ্ধের জীবনে নানা গুরত্বপূর্ণ ঘটনা সংঘটিত হয়েছে। এক আষাঢ়ী পূর্ণিমায় গৌতম বুদ্ধ সিদ্ধার্থরূপে মাতৃগর্ভে প্রবিষ্ট হয়েছিলেন। বর্ণিত আছে কপিলাবস্তু নগরে আষাঢ়ী মাসের পূর্ণিমা সাড়ম্বরে উদযাপিত হতো। এক আষাঢ়ী পূর্ণিমায় রাজা শুদ্ধোধনের মহিষী রাণী মহামায়া উপোমথ ব্রত গ্রহণ করেন। সে রাত্রে রাণী মহামায়া স্বপ্নমগ্না হয়ে দেখলেন যে চারদিক থেকে পাল দেবগণ এসে পালঙ্কসহ তাকে নিয়ে গেলো হিমালয়ের পর্বতের এক সমতল ভূমির ওপর।
সেখানে মহামায়াকে সুউচ্চ এক মহাশাল বৃক্ষতলে রেখে দেবগণ সশ্রদ্ধ ভঙ্গিমায় এক পাশে অবস্থান নিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ল। এরপর দেবগণের মহিষীরা এসে মায়াদেবীকে হিমালয়ের মানস সরোবরে স্নান করিয়ে দিব্য বসন-ভূষণ ও মাল্যগন্ধে সাজিয়ে দিলেন। খানিক দূরেই একটি শুভ্র রজতপর্বতে ছিল একটি সুবর্ণ প্রাসাদ। চারিদিক থেকে পাল দেবগণ মহারাজা পুনঃপালঙ্কসহ দেবীকে সেই প্রাসাদে নিয়ে গিয়ে দিব্যশয্যায় শুইয়ে দিল।
ভিক্ষুদের অন্যতম বাৎসরিক আচার বর্ষাবাস শুরু হয় আষাঢ়ী পূর্ণিমাতে। শেষ হয় আশ্বিনী পূর্ণিমাতে। বর্ষাকালে সিক্ত বসনে এদিক-ওদিক ঘোরা-ফেরা করা, বস্ত্র তুলে চলা-ফেরা করা মানায় না বিধায় যেখানে-সেখানে ভিক্ষুদের বাস না করে গৌতম বুদ্ধ বর্ষাবাস গ্রহণের জন্য নির্দেশ দিয়েছিলেন বৌদ্ধ বিনয় মতে যে ভিক্ষু বর্ষাবাস যাপন করেন তিনিই কঠিন চীবর লাভের যোগ্য হন। বর্ষাবাস যাপন ব্যতিরেকে চীবর লাভ করা যায় না।
যে বিহারের ভিক্ষু বর্ষাবাস যাপন করবে না, সেই বিহারে কঠিন চীবর দানানুষ্ঠানও করা যাবে না। বর্ষাবাসের জন্য ভিক্ষুরা সংঘারাম, বিহার ও সাধনাকেন্দ্র বেছে নেয়।
Leave a Reply